যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশটির ছোট ব্যাংকগুলোর আমানত ১১ হাজার ৯০০ কোটি (১১৯ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার কমে ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি (৫ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন) হয়েছে। ২০০৭ সালের মার্চের পর থেকে ছোট ব্যাংকগুলোর এটিই সর্বোচ্চ আমানত কমার রেকর্ড।
সম্প্রতি লোকসানের আশঙ্কায় আমানতকারীরা তাঁদের আমানত তুলে নিতে শুরু করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধসে পরে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। এর পর থেকেই অন্যান্য ব্যাংকের আমানতকারী গ্রাহকদের মনেও ভয় কাজ করছে। ফলে অনেকেই ছোট ব্যাংক থেকে আমানত তুলে বড় ব্যাংকে রাখছেন কিংবা অন্যত্র বিনিয়োগ করছেন।
তবে আমানত কমলেও ছোট ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের তথ্যে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে ছোট ব্যাংকগুলো থেকে ২৫ হাজার ৩০০ কোটি (২৫৩ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছেন গ্রাহকেরা। এতে ছোট ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ হাজার ৯৬০ কোটি (৬৬৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন) ডলার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ২৫টি ব্যাংক বাদে বাকি ব্যাংকগুলোকে ছোট ব্যাংক হিসেবে ধরা হয়েছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস–এর বিশ্লেষক পল অ্যাশওয়ার্থ বলেছেন, এর ফলে সপ্তাহের শেষে ছোট ব্যাংকগুলোর হাতে আর ৯ হাজার ৭০০ কোটি (৯৭ বিলিয়ন) ডলার নগদ অর্থ রয়েছে।
অন্যদিকে ছোট ব্যাংকগুলোর আমানত কমলেও বড় ব্যাংকগুলোর আমানত–প্রবণতা বিপরীতমুখী ছিল। বড় ২৫টি মার্কিন ব্যাংকে এক সপ্তাহে আমানত ৬ হাজার ৭০০ কোটি (৬৭ বিলিয়ন) ডলার বেড়ে ১০ লাখ ৭৪ হাজার কোটি (১০ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন) ডলার হয়েছে। পাশাপাশি বড় ব্যাংকগুলোও ঋণ করেছে। গত এক সপ্তাহে এসব ব্যাংক ২৫ হাজার ১০০ কোটি (২৫১ বিলিয়ন) ডলার ঋণ করেছে।
বড় ব্যাংকগুলোর আমানত বৃদ্ধির একটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়, তা হলো ছোট ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণে আমানত কমেছে, তার প্রায় অর্ধেকের সমান আমানত বেড়েছে বড় ব্যাংকগুলোয়। অর্থাৎ কিছু নগদ অর্থ বাজারে অন্য কোনো তহবিল বা বিকল্প স্থানে চলে যেতে পারে। কিন্তু ছোট ব্যাংক থেকে বড় ব্যাংকে আমানত স্থানান্তরের এই প্রবাহ আগামী সপ্তাহগুলোতেও অব্যাহত থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে সব মিলিয়ে বর্তমানে ব্যাংকগুলোয় আমানতের পরিমাণ কমেছে। করোনার সময়ে দেওয়া সহায়তার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সার্বিকভাবে ব্যাংকের আমানত অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০২২ সালে এসে তা আবার কমতে শুরু করে, যা চলতি বছরেও অব্যাহত রয়েছে।