বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইয়েলেন বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ের ছোট ছোট কমিউনিটি ব্যাংক চাপে আছে, তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, যদিও এদের আমানতের বড় একটি অংশের বিমা নেই। তবে তাঁর আত্মবিশ্বাস, বিমার আওতার বাইরে থাকা আমানত গ্রাহকেরা তুলে নিতে চাইলেও এসব ব্যাংকের সমস্যা হবে না, কারণ তাদের প্রায় সবার প্রয়োজনীয় আমানত লাভের সুযোগ আছে।
তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, আঞ্চলিক পর্যায়ের মাঝারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে কিছু একীভবন হতে পারে। তবে তিনি কোনো বিশেষ ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেননি।
ধনী দেশগুলোর জোট জি৭-এর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি হতে পারে যে কিছু ব্যাংককে একীভূত হতে হবে; আপনারা জানেন, আমি মনে করি সে জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উন্মুক্ত থাকা উচিত।
সেই সঙ্গে ইয়েলেন জি৭-ভুক্ত দেশগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত স্থিতিশীল আছে। তিনটি ব্যাংক ধসে যাওয়ার পর ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
গত শুক্রবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনেট ইয়েলেন আরও বলেন, ধসে যাওয়া তিনটি ব্যাংক বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল, তাদের বিমাবিহীন আমানতও বেশি ছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট তারল্যের জোগান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর আয়ও ‘খুব ভালো’।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আঞ্চলিক ব্যাংকের শেয়ারদর সম্প্রতি বেশ ওঠানামা করেছে। বিনিয়োগকারীরাও মাঝারি আকারের ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেবিডব্লিউ রিজিওনাল ব্যাংকিং ইনডেক্স এ মাসে পয়েন্ট হারিয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। তবে শুক্রবার এই সূচকের পয়েন্ট বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে ধসে যাওয়া তিনটি ব্যাংকের মতো প্যাক ওয়েস্ট ব্যাংক করপোরেশনের আমানত কমে যাওয়ার খবরে শেয়ারদর কমেছে—বৃহস্পতিবার তাদের শেয়ারদর কমেছে ২৩ শতাংশ। শুক্রবার তাদের দর কমেছে ৩ শতাংশ।
ইয়েলেন বলেন, ‘ব্যাংকের শেয়ারদর কমে যাওয়ার কারণে বিমাবিহীন আমানতকারীরা কিছুটা অস্থিতিশীলতার মুখে পড়তে পারেন। ব্যাংকের হাতে যথেষ্ট তারল্য থাকার পরও এই শ্রেণির আমানতকারীরা বিপদের মুখে পড়তে পারেন।’
গত মার্চ মাসে তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংক। এরপর বন্ধ হয়ে যায় ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর দেশটির ব্যাংকিং খাত এত বড় সংকটের মুখে আর পড়েনি।
তবে দেশটির এবারের সংকটে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বেইল আউট করা বা নানাভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়নি (২০০৮ সালে যা করা হয়েছিল), বরং সংকট গুরুতর হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক—উভয় ক্ষেত্রেই এ ঘটনা দেখা গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হলো। সরকার তাদের রক্ষা করার চেষ্টা করেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বারবার বলেছেন, বিনিয়োগকারী বা পরিচালকদের ঝুঁকি নিতে হবে, ঝুঁকি থেকে তাঁরা লাভবান হতে পারেন; আবার তা না হলে ব্যর্থতার দায়ও তাঁদের নিতে হবে—এটাই পুঁজিবাদের নিয়ম। সরকার তাঁদের রক্ষা করবে না। সরকার আমানতকারীদের সুরক্ষা দেবে।
অর্থসংবাদ/এসএম