বাংলার ক্রিকেটের এক মহা স্তম্ভ তিনি, ভূমিকাটা ঐতিহাসিক চীনের প্রাচীরের ন্যায় দূর্ভেধ্য-দূর্বার। খুলনায় উদিত অসংখ্য তারার ভিড়ে তিনি এক সূর্য; যার শুভ্র রশ্মি ছড়িয়েছে দূর দিগন্তে; বিশ্বজুড়ে।
বিশ্ব ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান বাংলার পথিকৃৎ-পথ প্রদর্শক। বাঘের গর্জনে বিশ্ব কাঁপাতে পথচলা তার দিগন্ত জুড়ে। বাঁ হাতের কারুকার্যে বিস্মিত বিশ্বকে পরিচয় দিয়েছেন আমি বাংলার; আমি বাঘেদের একজন বলে।
শত মাইল দূরত্বেও নিদ্রাহীন বাঙালির বাধন হারা উল্লাস আর বাধঁভাঙ্গা উচ্ছাসের উপলক্ষ তিনি, অসংখ্য-অগণিত বার। এই দেশের অর্জনের গর্জন তিনি, প্রতিবাদের হুংকার!
ব্রেক থ্রু দরকার, প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে হবে? দ্রুত উইকেট গেলো, এখন কি হবে? অধিনায়কের কপালে চিন্তার ভাঁজ, ড্রেসিংরুম করছে ছঁটফট, সমর্থকদের উদ্বেগ! তীব্র হাহাকার!
এমন অস্থিরতায় স্বস্তির আভা ছড়ানো বৃষ্টি হয়ে তার উপস্থিতি বারংবার! মায়াবী বিভ্রম ভেল্কিময় স্পিন ঘুর্ণিতে কিংবা উইলো হাতের মহা প্রলয়ী ঝড়োচ্ছ্বাসে, উন্মাদনার উত্তাল তরঙ্গে ভাসিয়েছেন বহুবার।
বনলতা সেনের জনপ্রিয় গানটির অবলম্বনে বলতে ইচ্ছে করে
‘এমন একজন কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল বাঘের রাজা সে যে রেকর্ডের খনি’
আজ এই রেকর্ডের খনির (সাকিব আল হাসান) বিশেষ একটি দিন। টেস্ট অভিষেক দিবস বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের। ১৮ মে ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সাদা পোশাক গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামেন সাকিব। অর্থাৎ সেদিন টেস্ট অভিষেক হয় তার।
টেস্ট ক্রিকেটে সাকিব
দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে মোট ৬৬ ম্যাচে সাদা পোশাকে মাঠে নামেন সাকিব। যেখানে তার রান সংখ্যা ৪ হাজার ৪৫৪। ৩৯.৭ গড়ে এ রান করেন তিনি। আছে ৫ সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফসেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রান ২১৭। বোলিংয়ে নিয়েছেন ২৩৩ উইকেট। যার মাঝে ১৯ বার ইনিংসে নেন ৫ উইকেট।
প্রায় ১৩৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সাকিবের চেয়ে একই সাথে ‘রান, উইকেট, ব্যাটিং গড়, ইনিংসে ৫ উইকেট, সেঞ্চুরি, ক্যাচ' বেশি নেই আর কোনো ক্রিকেটারের।
টেস্ট ক্রিকেটে একই ম্যাচে ‘ফিফটি ও ৫ উইকেটের' ডাবল মোট ৯ বার অর্জন করেছেন সাকিব আল হাসান। টেস্ট ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন শুধুমাত্র একজন, ইয়ান বোথাম (১১ বার)
টেস্ট ক্রিকেটে একই ম্যাচে ‘সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট' পেয়েছেন মাত্র তিনজন। এর মধ্যে সাকিব একজন। এমনকি ২১শতকে এই কীর্তি করা একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব। বাঁ-হাতি হিসেবেও এই কীর্তি গড়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব।
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৯টি দেশের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন ইতিহাসের চারজন বোলার। এর মধ্যে সাকিব একজন।
টেস্ট ক্রিকেটে ৯টি দেশের বিপক্ষে ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার ও টেস্ট ক্রিকেটে কমপক্ষে একটি শতক হাঁকানো একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব।
ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র স্পিনার হিসেবে সাউথ আফ্রিকার মাঠে প্রথম ২ টেস্ট ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব।
টেস্ট ক্রিকেটে এশিয়ান হিসেবে SENA দেশগুলোতে কমপক্ষে ১ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন ৯৪ জন। এদের মধ্যে SENA দেশগুলোতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক সাকিব আল হাসান (২১৭)।
SENA দেশগুলোতে কমপক্ষে ৩ বার ৫ উইকেট শিকার ও ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো একমাত্র এশিয়ান ক্রিকেটারও সাকিব।
টেস্ট ক্রিকেটে ৫ বার সিরিজসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। যা বর্তমানে খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টেস্ট ক্রিকেটে ৬ বার ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। যা বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ!
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই গ্রানাডার সেন্ট জর্জেস গ্রাউন্ডে ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের অভিষেক হয়। এই রেকর্ড গড়ার পথে সাকিব ভেঙেছেন মোহাম্মদ আশরাফুলের ২২ বছর ৩৫৩ দিন বয়সে টেস্টে অধিনায়ক হবার রেকর্ড।
সাকিবের নেতৃত্বেই প্রথমবারে মতো বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের পাশাপাশি প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদও পায় বাংলাদেশ। এখনো বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।