লম্বা সময় ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার কমছে। শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক সুদহার বাড়চ্ছে। ফলে নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার। দাম কমতে থাকায় বিপাকে পড়েছে জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমানোর মাধ্যমে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব, রাশিয়াসহ শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলো।
সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারক। দেশটি চলতি মাসে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত ছিল সাময়িক। অর্থাৎ বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে শুধু ওই মাসেই উত্তোলন কমানোর কথা ছিল। কিন্তু গতকাল দেশটি জানায়, আগস্টেও দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানো হবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমে আসবে, যা জ্বালানি তেলের দামের ওপর থেকে নিম্নমুখী চাপ কমাবে। ভারসাম্য ফিরবে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে।
এদিকে সৌদি আরব এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরই উত্তোলন ও রফতানি কমানোর ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেজান্ডার নোভাক বলেন, আগস্টে রাশিয়া দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি কমাবে। একই পরিমাণে কমানো হবে উৎপাদনও। এর আগে মার্চে এককভাবে দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাশিয়া।
দেশ দুটির উত্তোলন কমানোর ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৭১ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরবরাহ সংকটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ১৪ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। তবে মার্চ থেকে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় দাম কমতে শুরু করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দাম কমেছে গড়ে ৪০ শতাংশ।
সৌদি আরব এক দশকের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাজেটে উদ্বৃত্ত ফেরাতে সক্ষম হয়। কিন্তু চলতি বছর দেশটি আবারো বাজেট ঘাটতিতে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, বাজেটে ভারসাম্য ফেরাতে ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮১ ডলারে নিয়ে আসতে হবে দেশটিকে।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক এবং এর মিত্র জোট ওপেক প্লাস নামে পরিচিতি। জুনের একটি বৈঠকে জোটটি আবারো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। জোটের সঙ্গে চুক্তির আওতায় সদস্য দেশ সৌদি আরব দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর কথা জানায়।