বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ এই মুহূর্তে চরম পানিসংকটের মধ্যে রয়েছে। তথ্যটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরআই)।
পানির সংকট বলতে আসলে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যখন কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রাপ্ত মোট পানির চেয়ে চাহিদা বেশি থাকে। শিল্প, কৃষি, পরিবেশের চাহিদা এবং মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে তখন পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না।
ডব্লিউআরআই’র অ্যাকিউডাক্ট ওয়াটার রিস্ক ম্যাপ থেকে প্রকাশ পেয়েছে, পুরো পৃথিবীজুড়েই পানির চাহিদা বাড়ছে এবং ১৯৬০ সালের পর থেকে এ চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে।
পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে বেশি পানির সংকটে রয়েছে ২৫টি দেশ যার মধ্যে আছে সৌদি আরব, চিলি, সান মারিনো, বেলজিয়াম এবং গ্রিস। ২৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেরও নাম; আর ৫৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
তবে পানির চরমতম সংকটে থাকা পাঁচ দেশ হলো বাহরাইন, সাইপ্রাস, কুয়েত, লেবানন এবং ওমান।
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পানির চাহিদা কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও আফ্রিকা মহাদেশে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে পানির চাহিদা ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
অ্যাকিউডাক্টের বিশ্লেষণ বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ বছরে অন্তত এক মাস পানির তীব্র সংকটে ভোগেন; এ সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। ২০৫০ সাল নাগাদ এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৬০ শতাংশে।
প্রতিবেদনটির লেখকদের ভাষ্যে, পানির এমন সংকট মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তোলে। ফসল উৎপাদন থেকে গবাদিপশু পালন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা, এবং বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্য পূরণ- সমস্ত কিছুর কেন্দ্রবিন্দু পানি। উন্নত ব্যবস্থাপনা ব্যতীত পানির সংকট দিনদিন আরও তীব্র হবে।
অ্যাকিউডাক্ট বলছে, বৈশ্বিক জিডিপির ৩১ শতাংশ বা ৭০ ট্রিলিয়ন ডলার পানির তীব্র সংকটের মুখে পড়বে, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ উন্মুক্ত জিডিপির অর্ধেকেরও বেশি গড়ে তুলবে ভারত, মেক্সিকো, মিশর এবং তুরস্ক এ চারটি দেশ।
ইতিমধ্যে পানির সংকট বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলছে, এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য উৎপাদনেও। গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সেচযোগ্য কৃষির ৬০ শতাংশ, বিশেষ করে আখ, গম, চাল ও ভুট্টা পানির তীব্র সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত।
২০১০ সালে যে পরিমাণ খাদ্য ক্যালোরি উৎপন্ন করতে হতো, তার চেয়ে ২০৫০ সালে আনুমানিক ১ হাজার কোটি জনসংখ্যার জন্য প্রায় ৫৬ শতাংশ বেশি উৎপন্ন করতে হবে।
সংকট উত্তরণে পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, অবকাঠামো, এবং বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সিঙ্গাপুর এবং লাস ভেগাসের উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, স্বল্প পানি সরবরাহ থাকার পরেও এসব স্থান ঠিকই উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে। লবণাক্ততা রোধ, বর্জ্য পানির পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে পানি সংরক্ষণ করতে পেরেছে।
সার্বিকভাবে পানির সংকট কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রতিবেদনটির লেখকবৃন্দ।
অর্থসংবাদ/এসএম