চালু থাকা ও প্রস্তাবিত ৪ হাজার ৩০০ কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে জরিপ চালিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিইএম। এসব খনিতে মোট কর্মী সংখ্যা ২৭ লাখ। তাদের মধ্যে অন্তত চার লাখ কর্মী এমন সব খনিতে কাজ করেন, যাদের কার্যক্রম ২০৩৫ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে। এভাবে বিভিন্ন দেশে শতাধিক কয়লার খনি বন্ধ হয়ে যাবে আগামী দিনগুলোয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে সরকার ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। তার পরও কয়লা-পরবর্তী অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে এখনো তেমন পরিকল্পনা নেই। জিইএমের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডরোথি মেই জানান, সবার আগে বিভিন্ন দেশের সরকারকে এ বিষয়টিই নিশ্চিত করা দরকার। জ্বালানির রূপান্তরের কারণে তাদের কর্মীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি বলেন, ‘কয়লার খনিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কর্মীদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি শেষ হবে না।’
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে শিল্প-বিপ্লবপূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নেয় জাতিসংঘের দি ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিশ্বজুড়ে খনিজ কর্মীর সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজারে নেমে আসবে। এটি বর্তমান কর্মী সংখ্যার ১০ শতাংশ।
কয়লা শিল্পে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। সেখানে বর্তমানে কর্মীর সংখ্যা ১৫ লাখ। চীনের উত্তর প্রদেশগুলোয় কয়লা শ্রমিকরা কাজ করেন। বিশেষ করে শানসি, হেনান ও মঙ্গোলিয়ার দিকটায়। ২০৫০ সালের মধ্যে কেবল শানসি প্রদেশেই চাকরি হারাবে ২ লাখ ৪০ হাজার। দেশটির কয়লা শিল্প এর মধ্যেই নানা ধরনের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উত্তর ও উত্তর-পূর্বের জেলাগুলো প্রবৃদ্ধির জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে।
ম্যানিলাভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক সংগঠন পিপল অব এশিয়া ফর ক্লাইমেট সলিউশনের নির্বাহী প্রধান টম ওয়াং শিয়াওজুন বলেন, ‘শানসি প্রদেশের প্রতি ৩০ জনে একজন কাজ করেন কয়লা শিল্পে। এ শ্রমিকরা নতুন কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত নয়। কয়লার বাজার সংকুচিত হয়ে পড়লে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কোথা থেকে আসবে, তার এখনো সুরাহা হয়নি।’
ভারত দ্বিতীয় বৃহৎ কয়লা উৎপাদনকারী দেশ। সেখানে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০০ শ্রমিক জড়িত কয়লা কারখানার সঙ্গে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া ২০৫০ সালের মধ্যে ৭৩ হাজার ৮০০ কর্মী চাকরি হারাতে পারে। জ্বালানি শক্তির রূপান্তরের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে খাতটিতে। একই কথা প্রযোজ্য এশিয়া ও ইউরোপের কয়লানির্ভর দেশগুলোর জন্য। কয়লা খাতে এখনো বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসেবে রয়েছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) অনুসারে, বিদ্যুৎ খাতে ২০২০ সালে ১২ দশমিক ৩ গিগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঘটেছে।
প্রতিবেদনে গুরুত্ব পেয়েছে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের। বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের রূপান্তর পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু সে হিসেবে শ্রমশক্তির রূপান্তর হচ্ছে না। ফলে পরিবর্তনশীল বিশ্বে তারা কীভাবে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটাই প্রশ্ন। জিইএম পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রায়ান ড্রিসকেল টেট বলেন, ‘কয়লা শিল্প সার্বিকভাবে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই কয়লা শিল্পে কর্মীদের প্রতি হয়রানির জন্য কুখ্যাতি রয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের শ্রমিকদের সুরক্ষায় পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রয়োজন শিল্প কর্তৃপক্ষ ও সরকারের জন্য জবাবদিহিতা রাখা।’
অর্থসংবাদ/এসএম