২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ডলার ধার দিয়েছে চীন। সোমবার (৬ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড মেরির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এইডডাটা’ এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই প্রকল্পের আওতায় চীনের পাওনার পরিমাণ এখন এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি- যা দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণ সংগ্রাহকে পরিণত করেছে। মোট ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ আর্থিক সংকটে থাকা বিভিন্ন দেশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে এইডডাটা।
চীন বলছে, ১৫০ এরও বেশি দেশ বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে৷ আর ১৬৫ এরও বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজার প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের খবর পেয়েছে এইডডাটা। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সেতু, বন্দর, মহাসড়কসহ নানান অবকাঠামো তৈরিতে ঋণ দিয়েছে তারা।
এইডডাটা বলছে, ২০১৬ সালে প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল চীন৷ আর ২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বিভিন্ন দেশকে ঋণ ও সহায়তা হিসেবে প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল চীন। অন্যদিকে, একই খাতে যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে ৬ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ সহায়তা দেওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের মিত্র হয়ে উঠেছে। তবে একই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বসহ শ্রীলঙ্কা, জাম্বিয়ার মতো ঋণগ্রহীতা কিছু দেশ চীনের এ কৌশলের সমালোচনাও করেছে। তাদের দাবি, চীনের অর্থায়ন বিভিন্ন দেশের উপর এমন ঋণের বোঝা চাপিয়েছে, যা তারা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।
খেলাপির ঝুঁকি ও পদক্ষেপ
এইডডাটার গবেষকরা বলছেন, চীনের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত, এমনকি বাতিল হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। সে কারণে ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বেইজিং চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।
ঝুঁকি কমাতে চীনের নীতিনির্ধারকেরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন৷ এর মধ্যে একটি হলো, অবকাঠামো খাতে দেওয়া ঋণের পরিমাণ কমিয়ে জরুরি সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো। সে কারণে ২০১৫ সালে মোট ঋণের ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো খাতে দেওয়া হলেও ২০২১ সালে সেটি ৩০ শতাংশে নেমে আসে।
চীন ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি কমাতে বৈদেশিক মুদ্রার এসক্রো অ্যাকাউন্ট চালু করছে। ব্যবস্থাটি বিতর্কিত কারণ এটি চীনকে ঋণ ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে হুকুমদাতার ক্ষমতা দেয়। অর্থাৎ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদাতারা যেকোনো সমন্বিত ঋণের ক্ষেত্রে দ্বিগুন অর্থ ফেরত পেতে পারে।
চীনা ঋণের গন্তব্য
২০১৮ সালের চীনের দেওয়া মোট ঋণের ৩১ শতাংশ পেয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ। ২০২১ সালে সেটি ১২ শতাংশে নেমে যায়৷ আর ২০২১ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে দেওয়া চীনের ঋণের পরিমাণ চার গুন বেড়েছে, যা এখন মোট ঋণের ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ ইউরোপে অধিক ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন মিত্র সৃষ্টি করতে আগ্রহী চীন।
অর্থসংবাদ/এসএম