এশিয়ার বাজারে চলতি সপ্তাহে বেড়েছে চালের চাহিদা। এতে তিন মাসের সর্বোচ্চে উঠেছে থাই ও ভিয়েতনামি চালের দাম। একই সময়ে বেড়েছে ভারতীয় চালের সরবরাহ।
ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেছেন, থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম গত সপ্তাহের ৬০০ ডলার থেকে বেড়ে প্রতি টনের মূল্য উঠেছে ৬৫০ ডলারে। মূলত ফিলিপাইন ও অন্যান্য দেশ থেকে ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় এ দাম বেড়েছে। সরবরাহকারীরা বিক্রি করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। দাম আরো বাড়ার প্রত্যাশায় অনেকেই এখন বিক্রি না করে মজুদ করে রেখেছেন।
ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা চাল গত সপ্তাহেও টনপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৬৫৫ ডলারে। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫৫-৬৬৫ ডলারে।
হো চি মিন শহরভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেছেন, চলতি সপ্তাহে চালের বাজার নিয়ে ফিচ সলিউশনের শাখা বিএমআইর একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এশিয়ার বাজারগুলোয় চালের দাম বেড়েছে। ওই প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, আগামী বছর এল নিনোর প্রভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সরবরাহ কমায় রফতানি সীমিত করবে শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলো, যা খাদ্যশস্যটির দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
প্রাথমিক শিপিং ডেটা বলছে, নভেম্বরে হো চি মিন সিটি বন্দরে থাকা জাহাজগুলোয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩১৭ টন চাল লোড করা হয়েছে। এসব চালের বেশির ভাগেরই গন্তব্য আফ্রিকা, কিউবা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া। আরো ৫ হাজার ৭০০ টন চালের ক্রয়াদেশ রয়েছে, যেগুলো ১-১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানো হবে।
প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করেছে ভিয়েতনাম, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
তবে শীর্ষ রফতানিকারক ভারতের ৫ শতাংশ ভাঙা-আধা সেদ্ধ চালের বাজার গত সপ্তাহের দামেই অপরিবর্তিত। টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫০৭ ডলারে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাডার এক রফতানিকারক বলেছেন, অন্যান্য দেশের চালের দাম ভারতের তুলনায় বেশি থাকায় ভারতীয় চালের বিক্রি বেড়েছে। তবে গত মাসে ভারত ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সেদ্ধ চালের রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এতে ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় চালের আমদানি খরচও বেড়ে গেছে।
এদিকে ফিচ সলিউশনের প্রতিবেদনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পূর্বাভাসদাতারাও সম্প্রতি জানিয়েছেন, এল নিনোর প্রভাব উত্তর গোলার্ধে ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। একই তথ্য জানিয়ে জাপানের আবহাওয়া ব্যুরো বলেছে, উত্তর গোলার্ধে এল নিনোর প্রভাব বাজায় থাকার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ।
ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলেছেন, কম চাল উৎপাদন ও খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকির সঙ্গে ভারত আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রফতানি নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে পারে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডেও রফতানি করার মতো কম উদ্বৃত্ত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাডায় এক রফতানিকারক বলেন, ধান উৎপাদনকারী অনেক রাজ্যে মাটির আর্দ্রতার মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে গেছে। আর গত ১০ বছরের গড়ের নিচে নেমেছে পুকুর-জলাশয়ের পানির স্তর।
অন্যদিকে ভালো ফলন ও মজুদ থাকা সত্ত্বেও চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে চালের অভ্যন্তরীণ মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির কারণে সরকার ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।