অনুষ্ঠানে মূল ভাষণে শি জিনপিং বলেন, নভেল করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত করে তুলেছে। তবে, চীন উন্মুক্তকরণ জোরদার করেছে, উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন করেনি। বিভিন্ন দেশের উচিত কল্যাণমূলক সহযোগিতা, অভিন্ন দায়িত্ব, অভিন্ন পরিচালনা-ভিত্তিক উন্মুক্তকরণের জন্য চেষ্টা করা। চীন উন্মুক্তকরণ, সহযোগিতা, একতা, অভিন্ন স্বার্থ অর্জনের ধারণা নিয়ে সার্বিকভাবে উন্মুক্তকরণ বাড়াবে, চীনা বাজার বিশ্বের বাজার, ভাগাভাগির বাজার, সবার বাজার তৈরি করবে, বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার জোরদার করবে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য চালিকাশক্তি যোগাবে।
ভাষণে তিনি আরো বলেন, চীন মহামারি প্রতিরোধ নিশ্চিত করার পূর্বশর্তে এই মেলা আয়োজন করেছে। এতে বিশ্বের সঙ্গে বাজারের সুযোগ ভাগাভাগি করা, বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চীনের আন্তরিক ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, চীন উন্মুক্তকরণের জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেবে। প্রথমত, নতুন উন্মুক্ত এলাকা প্রতিষ্ঠা করবে, আরো বেশি উন্মুক্তকরণের নীতি কার্যকর করবে এবং উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে সংস্কার বাড়াবে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক বাণিজ্যের নব্যতাপ্রবর্তন জোরদার করবে। তৃতীয়ত, অব্যাহতভাবে বাণিজ্যিক পরিবেশ উন্নত করবে। চতুর্থত, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।সিআইআইআই ব্যুরোর উপপরিচালক সুন ছেং হাই বলেছেন, তৃতীয় চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোতে ৭২.৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বানিজ্যিক চুক্তি হয়েছে যা গত এক্সপোর তুলনায় ২.১ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে এক্সপোতে স্বাক্ষরিত চুক্তির পরিমান ছিল ৫৭.৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং গত বছর দ্বিতীয় এক্সপোতে ৭১.১৩ বিলিয়ন ডলারের মূল্যমানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এবারের অনলাইন-অফলাইন মেলায় ৪ লাখ ভোক্তা অনলাইনে নিবন্ধন করেছে। ৪১০ রকমের নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয়েছে। বিশ্বের ৫০০ শ্রেষ্ঠ কোম্পানির মধ্যে ৮০ শতাংশ এতে অংশগ্রহণ করেছে। খাদ্য ও কৃষিপণ্য খাতে অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের ৫০০ শ্রেষ্ঠ গাড়ি কোম্পানির মধ্যে ৯০ শতাংশ এতে যোগ দিয়েছে।
চীন সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কোভিড - ১৯ মহামারী কারনে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীক মন্দা থাকার সত্ত্বেও তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপোতে স্বাক্ষরিত চুত্তির রেকর্ডের মোট মূল্য বিগত দুটি এক্সপো ছাড়িয়ে গেছে।
চীন সরকারের আমন্ত্রনে সেদেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া তিনি এক্সপোতে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এসময় বাংলাদেশ এম্বাসি বেইজিং এর কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনসুর উদ্দীন, সোশ্যাল সেক্রেটারি এবং রাষ্ট্রদূতের দোভাষী জোয়ে জাং এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি হাংজো হাইভ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর স্বতাধিকার মো: ফররুখ উদ্দিন পিয়াস বলেন, আমি সাংহাইয়ের তৃতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপোতে অংশ নিয়েছি। দুর্দান্ত এই সিআইআইআই তে অংশ নিয়ে চীনা বাজারের সন্ধান সহ বিশ্বজুড়ে সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এবং পেশাদার ক্রেতাদের সাথে মিলিত হতে পেরেছি। প্রদর্শনী হল গুলোতে প্রযুক্তি, অটোমোবাইলস সরঞ্জামাদি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য এবং কৃষি পণ্য ছিল।
এক্সপোতে অংশ নেওয়া আরেক বাংলাদেশি জান্নাতুল আজমিরা রুমকি বলেন, আমি ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি তে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এ পড়াশুনা করছি। পাশাপাশি আমি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বিজনেস এর সাথে জড়িত আছি। গত ৭ নভেম্বর আমি সাংহাই এ অনুষ্ঠিত চায়না থার্ড ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে চায়না সহ আরও বিভিন্ন দেশের নতুন নতুন প্রোডাক্টের সাথে পরিচিত হয়েছি।আশা করি ভবিষ্যৎ এ এসব প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারবো এবং বাংলাদেশে এগুলার প্রসার ঘটাতে পারবো।
বাংলাদেশ এম্বাসি, বেইজিং এর কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনসুর উদ্দীন বলেন, গত বছরের মত এই বছরও আমাদের তৃতীয় চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোতে অংশগ্রহন করার প্রস্তুতি ছিল। এম্বাসির মাধ্যমে এক্সপোতে অংশগ্রহন করার জন্য যাবতীয় তথ্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোভিড - ১৯ এর মহামারীর কারনে এই বছর কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করে নাই।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তৃতীয় সিআইআইইকে নির্ধারিত সময়ে শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং চীনা জনগণকে ধন্যবাদ জানান। দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রমাফোসা। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আফ্রিকা একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রামাফোসা বলেন, চীন আমাদের দীর্ঘকালীন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যের অংশীদার। সিআইআইই আফ্রিকান দেশ এবং উদ্যোগক্তারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা পূর্বের সিআইআইইতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। তিনি তৃতীয় সিআইআইইর সাফল্য কামনা করে।
চিলির রাষ্ট্রপতি সেবাস্তিয়ান পিনেরা রাষ্ট্রপতি শি কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি শি'র নেতৃত্বে চীন বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সক্রিয় সহযোগিতা প্রচারে বদ্ধপরিকর।
তিনি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার উন্নতি, ডিজিটাল প্রযুক্তি বিপ্লব প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, স্পেন ও চীন ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং উভয় দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আন্তঃসংযোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে একটি স্থিতিশীল এবং প্রত্যাশিত বহুপক্ষীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত।
উল্লেখ্য, গত বছর সাংহাইয়ে দ্বিতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপো - ২০১৯ (সিআইআইই) তে সাংসদ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল সিআইআইই হং ছিয়াও ফোরামে এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক (টেক্সটাইল) মো. শামসুউদ্দীন আহমেদের পরিচালনায় ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে অংশগ্রহণ করে।