কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৫৯টি ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলো সারাদেশে ১০ হাজার ৬৩০টি শাখা খুলেছে। কিন্তু শাখানির্ভর ব্যাংকিং সেবা সব মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছাতে পারেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখাগুলোতে ঋণ ও ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করছে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং বড় ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। নিম্নবিত্ত সাধারণ জনগণ এবং ছোট শিল্প ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই সব শ্রেণির মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিতে নতুন নতুন সেবা চালুর প্রক্রিয়া ২০০৯ সাল থেকে অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছর থেকে অন্তভুর্ক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবার ধারণা ব্যাপকভাবে ব্যাংকিং নীতিতে স্থান করে নিয়েছে। খরচ কমিয়ে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অন্তভুর্ক্তিমূলক ব্যাংকিং ধারণার একটি হলো উপশাখা ব্যাংকিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০টি ব্যাংক উপশাখা চালু করেছে। তাদের খোলা উপশাখার সংখ্যা এক হাজার ২৭৫টি। সর্বোচ্চ ৩২৮টি উপশাখা চালু করেছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০১টি উপশাখা খুলেছে আইএফআইসি ব্যাংক। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক ১৮২টি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫৯টি, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক ৫৪টি করে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৪০টি, যমুনা ব্যাংক ৩৮টি এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৩২টি উপশাখা চালু করেছে।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে উপশাখা চালু করা হচ্ছে। এতে স্বল্পখরচে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সহজে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, উপশাখা থেকে ব্যাংকিংয়ের প্রায় সব সুবিধাই পাওয়া যায়। উপশাখাকে স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবার আউটলেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে প্রচলিত শাখা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যয়সীমার চেয়ে উপশাখা স্থাপনের ব্যয় এবং প্রচলিত শাখা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবার জন্য নির্ধারিত ফি, চার্জ ও কমিশনের চেয়ে ব্যাংকিং বুথে সেবা প্রদানের ফি, চার্জ, কমিশন প্রভৃতি কম ছাড়া বেশি হবে না। উপশাখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়া এবং স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবা আউটলেটের মাধ্যমে অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তি নিশ্চিত করা।
একসময় ব্যাংকের ব্যবসা হিসেবে শাখা ব্যাংকিং, কৃষিশাখা, এসএমই শাখা, বুথ (কালেকশন বুথ, ফার্স্ট ট্র্যাক, সেবাঘর ও ইলেকট্রনিক বুথ) ও ব্যবসা উন্নয়ন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বল্পব্যয়ে ব্যাংকিং সেবা কীভাবে মানুষের নাগালে পৌঁছানো যায়, তারই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথ স্থাপন-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে।
এতে বলা হয়, ব্যাংকিং বুথের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এরপরই ব্যাংকগুলো বুথ স্থাপন জোরদার করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারির মাধ্যমে ব্যাংকিং বুথকে উপশাখায় রূপান্তর করে।
অর্থসংবাদ/ এমএস