চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের ঋণ স্থিতির বিপরীতে বাড়তি এ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত সঞ্চিতিকে ‘স্পেশাল জেনারেল প্রভিশন কভিড-১৯’ নামে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটে পৃথকভাবে প্রদর্শন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকগুলোর নগদ আদায় ব্যতিরেকে ঋণের ওপর আরোপিত সুদ আয়খাতে নেয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বা ঋণ ছিল ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ঋণের পরিমান প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংকগুলোকে তাদের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১ শতাংশ অতিরিক্ত সঞ্চিতি রাখতে তার জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায় প্রয়োজন হবে। পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংককে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। সে হিসাবে ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে।
দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ইতিপূর্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ শ্রেণিকরণের বিষয়ে এ মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল যে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উক্ত ঋণ তদাপেক্ষা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা যথাযথ নিয়মে শ্রেণিকরণ করা যাবে। কিস্তি পরিশোধের জন্য বর্ধিত সময়ের সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তরকরণ এবং ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছিল।
এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় রাখা ও দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নীতিমালা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে সকল ঋণ কিস্তি পরিশোধের জন্য বর্ধিত সময়ের সুবিধাপ্রাপ্তির কারণে অশ্রেণিকৃত অবস্থায় রয়েছে, সেসব ঋণের বিপরীতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরোপিত সুদ নগদ আদায় ব্যতিরেকে আয়খাতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ঋণের সম্ভাব্য আদায় ঝুঁকি পর্যালোচনাপূর্বক নিম্মোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে:
ঋণের স্থিতি ১০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তরের জন্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনা (যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক) অডিট কমিটির সুপারিশসহ পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
ঋণের স্থিতি ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে হলে আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তরের জন্য শাখা প্রধানের সুপারিশসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। আর ঋণের স্থিতি ৫ কোটি টাকার কম হলে আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন দিতে হবে শাখা প্রধানের সুপারিশসহ তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।
উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে কোনো ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করা না হলে তা ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঋণের বিপরীতে স্পেসিফিক প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঋণের শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং-এর বিধান অনুযায়ী আবশ্যিক প্রভিশন হিসাবায়নপূর্বক যথারীতি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। আর জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঋণের শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং এর বিধান অনুযায়ী আবশ্যিক প্রভিশন হিসাব করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ ভিত্তিক হিসাব চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এসএমএ ঋণসহ সকল অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এ প্রভিশনকে ‘স্পেশাল জেনারেল প্রভিশন কভিড-১৯’ নামে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটে অন্যান্য দায়ের আওতায় আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিশেষ এ প্রভিশন অন্য কোন খাতে স্থানান্তর করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়।