গত বছরের শেষ প্রান্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়। তার প্রভাবে আবারও লকডাউন দিতে বাধ্য হয় অনেক দেশ। ভ্রমণ ও চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। ২০২১ সালের প্রথম মাসেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। তার জেরে সেবা বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছে ডব্লিউটিও।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সব বড় দেশের সেবা রপ্তানি নভেম্বর মাসে হ্রাস পেয়েছে। ভারতের কমেছে ৫ শতাংশ, চীনের ১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ শতাংশ। এ ছাড়া বড় অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে অস্ট্রেলিয়ার, ৩৭ শতাংশ। এরপর রাশিয়ার কমেছে ৩১ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ১৫ শতাংশ ও জার্মানির ৭ শতাংশ।
ব্যাপারটা হলো, পণ্য না হলে মানুষের চলে না। তাই পণ্য বাণিজ্য দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে সেবা বাণিজ্যের চাহিদা সেভাবে বাড়ছে না। সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্রমণ। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ কম। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের ব্যয় ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৮ শতাংশ কম—এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে ৮০ শতাংশ, উত্তর আমেরিকায় ৭৮ শতাংশ আর ইউরোপে ৫৫ শতাংশ। গ্রীষ্মকালে ইউরোপে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে তৃতীয় প্রান্তিকে সামান্যই ঘুরে দাঁড়ায় ভ্রমণ খাত।
নির্মাণ, বিনোদন, আইনি, আর্থিক—নভেম্বরে সেবা খাতের এসব জায়গায় সংকোচন হয়েছে। বলা যায়, এগুলোর গতি অসম, কখনো একটু বাড়ছে, কখনোবা কমছে। এগুলোর অধিকাংশ উপখাত সংকুচিত হয়েছে। তবে কম্পিউটার সেবার উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সবখানেই নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারণে এই খাতের সংকোচন হয়েছে ১৬ শতাংশ। ৩৯টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব করেছে ডব্লিউটিও। অক্টোবরের তুলনায় অবশ্য কিছুটা ভালো। সে মাসে সংকোচন হয়েছিল ১৮ শতাংশ।
তবে ৭০টি দেশের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, পণ্য বাণিজ্য গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নভেম্বর মাসে তা আরও বেড়েছে। সে মাসে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য বার্ষিক হিসাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে সব অঞ্চলের একই রকম প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। নভেম্বর মাসে এশিয়া ও ইউরোপের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ৬ শতাংশ। তবে উত্তর আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকায় এখনো তা কম।