তিনি বলেছেন, যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বেশি তাদের শরীরে কোনো ভাইরাস টিকতে পারে না। আর তাই যেকোনো ধরণের ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের প্রথমেই যেটা করতে হবে, খাবারটা ঠিক করতে হবে। আমাদের চিনি জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে। আমাদের যে কোনো প্যাথজেন সুগারের কারণে বৃদ্ধি পায়। ভাইরাসটা হয়তো সরাসরি সুগার খায় না, কিন্তু যে প্যাথজেনগুলো ওই ভাইরাসে ব্যবহার করে সেগুলোকে বৃদ্ধি করে এই সুগারজাতীয় খাবার। সুগার জাতীয় খাবার বডিতে ইনফ্লামেশন তৈরি করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেমিকেল মেশানো খাবার যদি আপনি এড়িয়ে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, আজকে যে এত মানুষ অসুস্থ হচ্ছে তার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে আমরা প্রসেসড খাবার, রাসায়নিক দেয়া খাবার খাচ্ছি।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বাজারে মাস্কের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু সুগারজাতীয় খাবারের বাজার ঠিকই আছে। ক্যান্ডি, কোক, ফান্টা, আইসক্রিম, চকলেট, চুইংগাম কিন্তু মানুষ প্রচুর খাচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে না যে এই জিনিসটা তার ক্ষতি করছে।
জাহাঙ্গীর কবিরের কথায়, আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যে কারা (করোনা ভাইরাসে) মারা গেছে। যারা বিভিন্ন রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত, যাদের ইমিউনিটি কম এবং অতি বৃদ্ধ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই কিন্তু বেশি মারা গেছে। স্ট্রং যারা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের ভালো তারা কিন্তু এখান থেকে সার্ভাইভ করে ফিরছে।
তিনি বলেন, কেমিকেল জাতীয় খাবার যদি আমরা খাই, তাহলে সেটা অবশ্যই লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সেটা ওষুধ কিংবা খাবারে মিশ্রিত কেমিকেল হোক সেটা ক্ষতি করবেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্ট্রেস বা চাপ থেকে মুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি স্ট্রেসের (চাপ) ভেতর দিয়ে যাই; সেটা শারীরিক হোক বা মানসিক হোক তাহলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল করে দেয়। অর্থাৎ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার কথা শুধু মুখে বললে হবে না। এজন্য পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠা জরুরি। আমরা যদি রাত জাগি তাহলে আমাদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা ভালো থাকবে না। সকালের রোদ লাগালে এবং ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তবে যারা আসলেই অসুস্থ যেমন- কারো যদি নিউমোনিয়া হয়, ডায়রিয়া হয়, ভাইরাস তো আসলে তেমন রোগ না। সত্যিকারে যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে তাদের ব্যায়াম করতে আমরা নিষেধ করি।
তার কথায়, ভাইরাস আসলে কোনো রোগ নয়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় একমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে।
তিনি বলেন, মানসিক স্ট্রেস কমাতে হলে মেডিটেশন করতে হবে। যারা নামাজ পড়েন, প্রকৃতপক্ষে যেভাবে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে সেভাবে করলে এটা দারুণ মেডিটেশন। এ থেকে মানসিক প্রশান্তি আসে। এটির মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক স্ট্রেস কমে।
তিনি বলেন, আমরা যদি রোজা রাখি তাহলে ইমিউনিটি সিস্টেমটা ভালো হয়। কারণ, যখন আপনি বার বার খাবেন তখন শরীর তার ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত করার সময় পায় না। তিনি খারাপ চর্বি জাতীয় খাবারও পরিহার করার পরামর্শ দেন।
ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের মতে, এই অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারি, তাহলে যেকোনো রোগ থেকেই রেহাই পেতে পারি। আর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ভালো থাকে তাহলে কোনো ধরণের ভাইরাস যদি শরীরে ঢুকেও যায় তাহলে তারা বাঁচতে পারবে না। আমরাই বরং বেঁচে যাবো।