ইউএনএফপিএ প্রকাশিত ফ্ল্যাগশিপ স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট ২০২১- এ এই তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) প্রতিবেদনটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনটি অনুযায়ী- আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার ৫৭টি দেশের প্রায় অর্ধেকের মতো নারী তাদের জীবনসঙ্গীর সাথে সহবাস করা বা না করার সিদ্ধান্ত, জন্মনিরোধক ব্যবহার করা বা না করা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের করার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত।
এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট নারীর শারিরীক স্বায়ত্তশাসনের ওপর আলোকপাত করেছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে- নির্যাতিত হওয়ার কোনো ভয়ভীতি বা অন্য কেউ তার হয়ে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব নেওয়া ব্যতীত নিজের শরীর এবং স্বত্তার ওপর কর্তৃত্ব করার শক্তি অর্জন করা। শারিরীক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বঞ্চিত হওয়া প্রতিটি নারী বা মেয়ের জীবনে মারাত্মক ক্ষতি করার চাইতেও বিশাল প্রভাব ফেলেঃ অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, নারীর দক্ষতা অবমূল্যায়িত হয়, এবং ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য ও আইনি সেবার ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবেদনে মূল তথ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে- আমার শরীর, কিন্তু সিদ্ধান্ত আমার নয়।
এই বৈশ্বিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে ইউএনএফপিএ দুইটি বিষয় পরিমাপ করছেঃ নারীর নিজের শরীর সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং সেই রাষ্ট্রের আইন কতোটুক পর্যন্ত নারীর শরীর সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সমর্থন করে বা বাধা প্রদান করে। তথ্য-উপাত্ত থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নারীর উচ্চ শিক্ষা এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে যে সকল দেশে তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়ঃ
মাত্র ৫৫ শতাংশ নারী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ, জন্মনিরোধক ব্যবহার এবং সহবাস করতে আগ্রহী বা অনাগ্রহী সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায়িত।
ইউএনএফপি-এর নির্বাহী পরিচালক, ড. নাটালিয়া কানেম বলেছেন, ‘প্রায় অর্ধেক নারী এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে সে যৌন মিলন করবে কিনা, গর্ভনিরোধক ব্যবহার করবে কিনা বা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করবে কিনা, যা আমাদের জন্য চুড়ান্ত অপমানজনক।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, লক্ষ কোটি নারী এবং মেয়ে, তাদের নিজেদের শরীরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। তাদের জীবন অন্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই প্রতিবেদনটি আরও যেসব উপায়ে নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে শিশু তাদের শারিরীক স্বায়ত্তশাসন থেকে বঞ্চিত সেগুলোর ওপরও আলোকপাত করেছে। যেমন—২০টি দেশ বা অঞ্চলে ‘তোমার ধর্ষককে বিবাহ কর’ আইন রয়েছে, যেখানে একজন ধর্ষক কোনো নারী বা মেয়েকে ধর্ষণ করার পর তাকে বিয়ে করে ফৌজদারি আইনের বিচার প্রক্রিয়া থেকে পার পেয়ে যেতে পারে।
৪৩টি দেশে বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে কোনও আইন নেই (জীবনসঙ্গী কর্তৃক ধর্ষণ)। ৩০ টিরও বেশি দেশে নারীদের ঘরের বাইরে চলাফেরা করায় বিধিনিষেধ রয়েছে।
প্রতিবন্ধী মেয়ে এবং ছেলে প্রায় তিনগুণ বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা সর্বাত্মক ঝুঁকিতে থাকে।