জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সব পুরুষ-নারীকে শান্তিরক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারি মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয় এ দিনে। ২০০৩ সাল থেকে এ দিনটি পালন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
শনিবার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী র্যালি-২০২১’-এর উদ্বোধন করবেন। পরে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা, শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও মানবিক আচরণ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে আমাদের শান্তিরক্ষী সদস্যরা আগামী দিনগুলোতেও বিশ্ব শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে- এ প্রত্যাশা করি।
তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সকল শান্তিরক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিশ্ব শান্তিরক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী বীর শান্তিরক্ষী সদস্যদের তিনি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ওই সব দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে যে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে, তা আমাদের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য পেশাদারিত্ব, সাহস, বীরত্ব ও দক্ষতারই অর্জিত ফসল।
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন- শান্তিরক্ষী সদস্যরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, সাহস ও নিষ্ঠা দ্বারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করবেন।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও বিশেষ জার্নাল প্রকাশ করা হবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ টকশো প্রচারিত হবে। এছাড়াও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে দেখানো হবে।