ভারতের চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমএস) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর সাম্প্রতিক পৃথক দুই গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে কোনো গবেষণা প্রতিবেদনেরই এখন পর্যন্ত পিআর রিভিউ হয়নি।
এআইআইএমএসের সাম্প্রতিক গবেষণায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে ভারতের জীবাণূ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইজিআইবি (ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইনটিগ্রেটিভ বায়োলজি)।
গবেষণায় মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন এমন ৬৩ জন রোগীর তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫৩ জন কোভ্যাক্সিনের অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন এবং বাকি ১০ নিয়েছেন কোভিশিল্ডের টিকা। কোভ্যাক্সিন/ কোভিশিল্ডের দুই ডোজ নিয়েছেন- এমন রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৬ জন।
গবেষণা প্রতিবেদনে এআইআইএমএস জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিন বা কোভিশিল্ডের টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার শতকরা হার ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ। দুই ডোজ নিয়েছেন- এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার শতকরা হার ৬০ শতাংশ।
ভারতের স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারি সংস্থা এনসিডিসির গবেষণাতেও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে আইজিআইবি। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিশিল্ডের দুই ডোজ নেওয়ার পরও ভারতে ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার শতকরা হার ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যে করোনার যে ধরনটি শনাক্ত হয়েছিল, সেই আলফাও কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন টিকার ডোজকে ফাঁকি দিতে সক্ষম, কিন্তু এটি ডেল্টার মতো এত শক্তিশালী নয় বলে জানিয়েছে এআইআইএমএস ও আইজিআইবি।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষসহ বিভিন্ন পশুপাখির মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ফলে ক্রমাগত অভিযোজন বা মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাস। পরিবেশ পরিস্থিতি ও আক্রান্তের শারিরীক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় মূল ভাইরাসটির পাশাপাশি এর কয়েকটি পরিবর্তিত/ অভিযোজিত প্রজাতিরও আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে, যেগুলোকে আমরা সাধারণভাবে ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট বলে উল্লেখ করে থাকি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত মূল করোনাভাইরাসের ৪ টি প্রধান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এবং এই ধরন বা ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রত্যেকটির বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে যে দেশে প্রথম কোনো একটি ধরন পাওয়া গিয়েছিল সেই দেশের নামে সেটির নামকরণ করা হয়।
যেমন—করোনাভাইরাসের যে ধরনের নাম বি.১.১.৭, সাধারণ মানুষজন সেই ধরনটিকে চেনেন ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট নামে। ঠিক তেমনি, ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়েন্টের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১,৬১৭।
গত বছর অক্টোবরে প্রথম শনাক্ত হয় বি.১.৬১৭। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৩ টি দেশ ও অঞ্চলে এটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মূল করোনাভাইরাসের তুলনায় এর সংক্রমণ ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি।
আন্তর্জাতিক জীবাণু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মূল করোনাভাইরাস তো বটেই, এমনকি এই ভাইরাসের ব্রিটিশ ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী বি.১.৬১৭ বা ডেল্টা।
সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন