এমন ঘটনা পৃথিবীর বেশ কিছু দেশেই ঘটেছে যে কোভিড নাইনটিন আক্রান্ত রোগী সেরে উঠেছেন - তার দেহ করোনাভাইরাস মুক্ত বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে - কিন্তু কিছুদিন পরই তার দেহে আবার এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। সাধারণ ঠান্ডার ক্ষেত্রে একবার আক্রান্ত হলে রোগীর দেহে সাধারণত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কোভিড নাইনটিনের বেলায় তা হচ্ছে না কেন?
ঘটনাটা খেয়াল করেছিলেন টোকিওর ডাক্তার ও গবেষকরা।
ফেব্রুয়ারি মাসে টোকিওর একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছিলেন। তাকে যথারীতি অন্য রোগীদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
জাপানের এনএইচকে টিভির সংবাদ অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি কিছুদিন পর সেরে ওঠেন এবং হাসপাতাল ছেড়ে যান। আগের মতই স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন পর লোকটির আবার জ্বর দেখা দেয়।
তিনি আবার সেই হাসপাতালে ফিরে আসেন এবং বিস্মিত ডাক্তারকে বলেন, তিনি আবার অসুস্থ বোধ করছেন।
ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন, লোকটি আবার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কথা বলেছিলেন
জাপানে কিন্তু এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। একজন রোগীর দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে ফিরে আসার ঘটনা কমই ঘটে, কিন্তু সংখ্যাটা যে একেবারেই কম - তাও নয়।
এমনটা ঘটে কেন?
স্পেনের জাতীয় বায়োটেকনোলজি কেন্দ্রের একজন ভাইরোলজিস্ট লুইস এনজুয়ানেস বলছেন, কোভিড নাইনটিন ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়েছেন এমন লোকদের ১৪ শতাংশের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমিত হবার ঘটনা ঘটেছে।
তার মতে, এটা ঠিক দ্বিতীয় সংক্রমণ নয়, বরং আসলে যা হচ্ছে তা হলো - ভাইরাসটা শরীরের কোথাও লুকিয়ে ছিল, এবং তা আবার ফিরে আসছে। এনজুয়ানেসের কথায়, একবার সংক্রমণ হলে মানুষের দেহে ভাইরাস প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু কিছু লোকের ক্ষেত্রে তা ঘটে না।
ভাইরাস শরীরের ভেতরে 'লুকিয়ে থাকতে' পারে এমন কিছু ভাইরাস আছে যা মানবদেহের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে।
এনজুয়ানেসের কথায়, দেহের কিছু প্রত্যঙ্গের এমন কিছু টিস্যু যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে রয়ে যায় - সেখানে ভাইরাস বসে থাকতে পারে।
তবে করোনাভাইরাস যে এত তাড়াতাড়ি তার লুকানো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে আবার আঘাত হানতে পারে - এটাই বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ১৪ শতাংশের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমিত হবার ঘটনা ঘটেছে
বিজ্ঞানীদের বিস্ময় আমরা জানি যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেক রোগের ক্ষেত্রে একেকভাবে কাজ করে।
যেমন, হাম প্রতিষেধক যে টিকা শিশুদের দেয়া হয়, তা প্রায় সারা জীবন তাকে হাম থেকে নিরাপদ রাখে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে বেশি বয়সে আরেকটি টিকা নেয়া দরকার হতে পারে।
এমন কিছু ভাইরাস আছে যাদের বিরুদ্ধে টিকা খুব ভালো কাজ করে না, তাই নিয়মিত বিরতিতে নতুন করে টিকা দিতে হয়।
ইনফ্লয়েঞ্জা বা সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিবছরই টিকা নিতে হতে পারে, কারণ এই ভাইরাস মিউটেশন প্রক্রিয়ায় নিজে নিজেই পরিবর্তিত রূপ নিয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা এখনো বোঝার চেষ্টা করছেন - কীভাবে কোভিড ১৯ এত দ্রুত দ্বিতীয় সংক্রমণ ঘটায়
ইসিদোরো মার্টিনেজ হচ্ছেন মাদ্রিদের কার্লোস থ্রি হেলথ ইন্সটিটিউটের গবেষক। তিনি বলছেন, কোভিড নাইনটিন একটা নতুন ভাইরাস তাই বিজ্ঞানীরা এখনো বোঝার চেষ্টা করছেন - কীভাবে এটা এত দ্রুত একই দেহে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঘটাতে পারে। .
একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে স্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হলে লোকে বার বার মহামারিতে আক্রান্ত হবে - এটাই স্বাভাবিক, বলছেন মার্টিনেজ।
তার কথায়, কোভিড নাইনটিন নিজেকে খুব বেশি পরিবর্তন করে না বলে আমরা ধারণা করি, কিন্তু একে ভালোভাবে বোঝার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন।