আফ্রিকা মহাদেশের গৃহযুদ্ধ ও দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। তারপর ২০২০ সালে নির্বাচনের কথা থাকলেও মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়।
সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির ক্ষমতায় আসীন হয় কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট সরকার। ২০১৮ সালে জোটের অন্তর্ভূক্ত দলগুলোর সম্মতিতে ক্ষমতার শীর্ষ পদে আসীন হন ইথিওপিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ।
আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য তাইগ্রে’র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)-এর সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় তার দল প্রসপারিটি পার্টির।
বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের একদল গবেষক ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলের তাইগ্রে সংঘাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা তাইগ্রেতে অন্তত ১৫০ টি গণহত্যা চালিয়েছেন; এবং এই গণহত্যায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী-শিশু ছাড়া ৯০ এর অধিক বয়সী বৃদ্ধও আছেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড এটি।
২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আবি আহমেদকে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা বলে মনে করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে তাইগ্রেতে ইথিওপিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা হয়। হামলার পর দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এই প্রদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টকে (টিপিএলএফ) ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে আইনের শাসন ফেরাতে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন আবি আহমেদ।
অবশ্য আবি আহমেদের দাবি, বেলজিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অতিরঞ্জিত। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাতে বর্তমানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে তাইগ্রেতে।
ইথিওপিয়ার পার্লামেন্টে আসনসংখ্যা ৫৪৭ টি। এর মধ্যে তাইগ্রের আসন আছে ৩৬৮ টি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী এলাকাগুলোর আসন রয়েছে মোট ৬৪টি। দেশটির নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের মোট ৫ কোটি ভোটারের মধ্যে ২১ জুন ভোট দিয়েছেন ৩ কোটি ৭০ লাখ ভোটার।
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ৪০ টি রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই আঞ্চলিক দল এবং পরিচিতিগত দিক থেকে এসব দলের প্রার্থীরা আবি আহমেদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন।
তাইগ্রে সহ দেশটির সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে তাতে দৃশ্যত তেমন বিচলিত দেখা যায় নি আবি আহমেদকে।
গত সপ্তাহে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচনের দিন রক্তপাত হবে ইথিওপিয়ায়। আমরা দেখিয়ে দেব- তাদের শঙ্কা সঠিক নয়।’
সূত্র: বিবিসি