বৈশ্বিক সংস্থাটির মতে, পর্যটন শিল্পে বিধিনিষেধ বজায় থাকায় চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি (১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন) থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি (২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন) ডলার হারাতে পারে। আর এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
গতকাল ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএনসিটিএডি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালের প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি। পর্যটন ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত খাতগুলোতে কভিড-১৯ মহামারীর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অপ্রত্যক্ষ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটকদের আগমন কমে যাওয়ায় এবং কোনো প্রণোদনা ব্যবস্থা না থাকায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন গড়ে আড়াইগুণ কমে যেতে পারে। ইউএনসিটিএডি পর্যটন খাতের লোকসানের তিন ধরনের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।
প্রথমত, চলতি বছর ২০১৯ সালের তুলনায় পর্যটকদের আগমন গড়ে ৭৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। এ আশঙ্কা সত্যি হলে বৈশ্বিক জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন থেকে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হারাবে। দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে আশাবাদ জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আগমন গড়ে ৬৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। ফলে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
তৃতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী, কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদানে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে পর্যটকদের আগমন ৭৫ শতাংশ এবং তুলনামূলক টিকাদানে এগিয়ে থাকা দেশগুলোতে পর্যটকদের আগমন ৩৭ শতাংশ কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার হারাতে পারে।
কভিড-১৯ মহামারীতে বৈশ্বিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ ক্ষতি বিশ্ব অর্থনীতিকে গভীর মন্দায় ডুবিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুসারে, বিশ্ব অর্থনীতি গত বছর ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। তবে এ বছর ৬ শতাংশ বাড়তে চলেছে।
পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারটি কভিডের টিকা প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে। তবে পুনরুদ্ধারটি অত্যন্ত অসম হতে চলেছে। টিকাদানের হার কম থাকায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পর্যটকদের আগমন রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে থাকতে পারে। ইউএনসিটিএডি বলেছে, পুনরুদ্ধারটি নির্ভর করবে টিকাদানের হার, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং পর্যটকদের আত্মবিশ্বাস পুনর্নির্মাণের ওপর।
আঞ্চলিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডের পর্যটন খাত দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। কারণ এ দেশগুলোতে উচ্চ টিকাদান হার এবং বিপুল পরিমাণ পর্যটক রয়েছেন।
এদিকে এ খাতের কর্মী ও মূলধন যদি অন্যান্য শিল্পে পুনরায় নিয়োগ করা যায় তাহলে অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের লোকসানের সামগ্রিক প্রভাব কিছুটা কম হবে। তবে পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প সময়ে এ পদক্ষেপ নেয়া কঠিন। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এ পদক্ষেপ থেকে দেশগুলো সুবিধা পাবে। ২০২৩ সালের আগে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধার হবে না বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি। এ কারণে সংস্থাটি তিনটি মূল নীতিগত সুপারিশ করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ সব দেশে পর্যটন খাতকে ট্র্যাকের দিকে ফিরিয়ে আনা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও ভ্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। আর এ কাজে টিকাদান কার্যক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, দেশগুলোকে অবশ্যই মানুষের জীবনযাত্রার ওপর পর্যটন ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনতে হবে। তৃতীয়ত, দেশগুলোকে ভবিষ্যতে এ খাতের ওপর অতিনির্ভরশীলতা নিয়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।