সিএনএনের সংবাদ অনুসারে, বাড়িতে বসে কাজ করলে প্রথমত গণপরিবহন অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ে। চাকরিজীবীদের চলাচলের টাকা থেকেই বেতন হয় গণপরিবহনকর্মীদের। আবার প্রতিদিন অফিসের পোশাক যে ড্রাই ক্লিনার পরিষ্কার করে বা অফিসে কোনায় দাঁড়িয়ে যে মানুষটি কফি বিক্রি করেন, তাঁর আয়েও প্রভাব পড়ে। চাকরিজীবীরা অফিসে না গেলে এসব সমস্যা সৃষ্টি হয়। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চাকরিজীবীদের বড় অংশ বাড়ি বসে অফিস করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির ৪২ শতাংশ ঘরে বসে কাজ করেছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কর্মী ঘরে বসে কাজ করতে চাইছেন। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস জানাচ্ছে, করোনার পরে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কাজে ফিরে এসেছেন। এ কারণে একটা বড়সংখ্যক কর্মী ট্রেনের টিকিট কাটা বা অফিসের কাছাকাছি রেস্তোরাঁয় কফি পানে অর্থ ব্যয় করছেন না। এই ব্যয় যেকোনো অর্থনীতির জন্য জরুরি।
সবচেয়ে ব্যস্ত শহর নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, সাবওয়েতে এখন পর্যন্ত অর্ধেক যাত্রীও ফিরে আসেনি। অথচ এই সাবওয়ে দেশটির যোগাযোগব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এ ছাড়া নিউইয়র্ক শহরের আয়ের বড় একটি অংশও আসে এই সাবওয়ে থেকে। করোনার আগে এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার আয় হতো। করোনায় তাদের আয় এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সরকারের কাছ থেকে ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা নিতে হয়েছে নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের। তারপরও ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাবওয়ে থেকে আয় করোনার আগের অবস্থায় আসবে না বলে মনে করছে নিউইয়র্কের হিসাব নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
মাঝে যদিও দেশটির করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, ডেলটা প্রজাতির প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের সুরক্ষায় বাড়ি থেকে কাজ করাই ঠিক মনে করছে। আমেরিকার শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও গুগল ইতিমধ্যেই অফিসে ফেরার সময় পিছিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থা মাস্ক পরার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। এখন উচ্চ সংক্রমণ এলাকায় টিকা পাওয়া নাগরিকদেরও মাস্ক পরতে হবে।
এসব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পিছিয়ে যাচ্ছে।