এই তারল্য সংকট ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমার হার (সিআরআর) ৩ শতাংশ কমানো হতে পারে। একই সঙ্গে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাপক বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার সবচেয়ে বড় উপায় বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানো। এ লক্ষ্যে সিআরআর ও এসএলআর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর হাতে 'অটোমেটিক' প্রচুর নগদ অর্থ তৈরি হবে।
পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাছে এসএলআরের অতিরিক্ত যে বন্ড থাকবে বাজারদরে তাও কিনে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত জানুয়ারি পর্যন্ত বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণের অতিরিক্ত হিসেবে ব্যাংকগুলোর হাতে এক লাখ তিন হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে নগদ আছে ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি অর্থ আছে বিল ও বন্ডে।
আমানতকারীদের সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে একটি অংশ রাখতে হয় নগদে এবং একটি অংশ রাখতে হয় বিভিন্ন বিল ও বন্ডের বিপরীতে। এ দুই মিলে গত ১ এপ্রিল থেকে প্রচলিত ধারার সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে ১৮ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১০ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।
এর আগে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১৮ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ১১ শতাংশ হারে অর্থ জমা রাখতে হতো। গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজের সবই সুদভিত্তিক। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা এবং এসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকে বিতরণ করতে হবে। যেখানে ব্যাংকগুলো সুদ পাবে ৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতের ৩০ হাজার কোটি টাকা গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে।
বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার ব্যাংককে দেবে। এ ছাড়া এসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণে ব্যাংকগুলো গ্রাহক থেকে ৪ শতাংশ সুদ নেবে। বাকি ৫ শতাংশ দেবে সরকার।
এর বাইরে বাকি তিনটি প্যাকেজের মধ্যে রপ্তানি খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরকারের বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইডিএফ তহবিলের আকার ৩৫০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭ শতাংশ সুদে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ইডিএফ ছাড়া বাকি তহবিলের নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।