বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) দুর্নীতির কারণে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। আফগান ভূখণ্ডের অর্ধেক জনগোষ্ঠীরই এখন মানবিক সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আফগানিস্তানে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল দারদারি আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, ‘বাজেট নিয়ে সমস্যা রয়েছে, রিজার্ভ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। দেশের বাইরে সংরক্ষিত ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের রিজার্ভ যদি পুরোপুরি আটকে রাখা হয়, তাহলে আফগানিস্তানে বাণিজ্য নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হবে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক; উভয় বাণিজ্যেই সমস্যা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দেশে এই (আফগানিস্তানের মতো) পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ-সহ দ্বিপাক্ষিক ও বহু-পাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করে একত্রিত হয় এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য একটি রূপরেখার প্রস্তাব করে। কিন্তু আফগানিস্তানে এমন কিছু হবে না।’
তবে আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতি নতুন নয়। গত মাসে দ্রুততার সঙ্গে তালেবান পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে থেকেই আফগানিস্তান ব্যাপকভাবে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। দেশটির মোট জিডিপিতে বিদেশি সাহায্যের অবদান এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যুক্ত থাকা কর্মীদের কাজের সুযোগ অব্যাহত রাখতে তালেবানের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। ফলে দেশটিতে জরুরি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দেশটির মৌলিক সেবাসমূহ ও কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সেসময় এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আফগান নারী, শিশু ও পুরুষদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন। এসময় তিনি আফগান নাগরিকদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানেরও অঙ্গীকার করেন।
গুতেরেস আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের মানুষের এই প্রয়োজনের সময়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে আমি জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দ্রুত ও সহজতর উপায়ে আফগানদের এই সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এদিকে বিমানবাহিনীর বিমানে আফগানিস্তানে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে পাকিস্তান। বিমানটি বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছায়। রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মনসুর খান ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেন।
ইসলামাবাদ থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করে রাষ্ট্রদূত মনসুর খান জানিয়েছেন, আগামীতে আফগান জনগণের জন্য ত্রাণ ও মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। শুক্র ও শনিবার আরও দু’টি বিমানে কান্দাহার এবং খোস্ত শহরে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হবে। পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনের প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দশ টন আটা, দেড় টন ঘি এবং বিপুল পরিমাণ ওষুধ। সীমান্ত দিয়েও ত্রাণ আসবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
গত মাসে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া আফগানিস্তানের জনগণের জন্য আকাশপথে একটি ‘মানবিক সেতু’ স্থাপনে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।