দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সামগ্রিকভাবে ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছিল। তবে গত ৩০ জুন শেষ হওয়া প্রান্তিকে সামগ্রিক ঋণ প্রাক-কভিড স্তরের তুলনায় ৩৬ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি বেড়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স (আইআইএফ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত ৩৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ হার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩৬২ শতাংশ থেকে ৯ পয়েন্ট কম। সামগ্রিকভাবে আইআইএফের পর্যবেক্ষণ করা ৬১টি দেশের মধ্যে ৫১টি দেশে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপির তুলনায় বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত কমে গিয়েছিল। মহামারীর ক্ষত কাটিয়ে দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক কার্যক্রম এ অনুপাত কমাতে সহায়তা করেছে।
আইআইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারটি জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাতকে প্রাক-কভিড স্তরের নিচে আনতে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। মহামারী শুরুর পর অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে, ব্যাংকগুলো শক্তিশালী ও আর্থিক বাজারকে স্থিতিশীল করতে বিশ্বজুড়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৫ লাখ কোটি ডলারের মুদ্রানীতি ও প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে অসম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মধ্যে সরকার এখনো অর্থ ঘাটতি বাড়ানোর দিকে তাকিয়ে আছে এবং ঋণগ্রহণ অব্যাহত রেখেছে।
গত বছর কভিডজনিত কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে গভীর মন্দায় পড়েছিল। যদিও চলতি বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে কভিডের অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রাদুর্ভাব এবং কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমে অসমতা অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তনের গতিতে হুমকি তৈরি করেছে।
বিশ্বজুড়ে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশগুলোর মোট ঋণ ৯২ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের একই সময়ে ৮৭ লাখ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ লাখ কোটি ডলার বেশি। উদীয়মান বাজারগুলোতে ঋণের ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রাক-কভিড স্তরের চেয়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের ঋণের পাহাড়ে যুক্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আইআইএফ বলেছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের ঋণ বৃদ্ধির গতি অনেক বেশি ছিল। এ বৃদ্ধির ৪০ শতাংশেরও বেশি দায়ী দেশটির অ-আর্থিক খাত।
চীন বাদে উদীয়মান অর্থনীতির ঋণও মহামারী শুরুর পর ৩৬ লাখ কোটি ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহণে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া। উদীয়মান অর্থনীতির পাশাপাশি উন্নত অর্থনীতিতেও ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এ দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে ২০৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ ঋণের পরিমাণ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির প্রায় ৪১৮ শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৯ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। দেশটিতে পারিবারিক ঋণ রেকর্ড গতিতে বাড়লেও করপোরেট ঋণ কমেছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে পারিবারিক ঋণ ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে ৫৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে সরকারি ও করপোরেট ঋণের পরিমাণ কিছুটা ধীরগতিতে বেড়ে যথাক্রমে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ও ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।