এদিকে, সরকার ঘোষিত ছুটিতে ব্যাংকিং সেবা সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এবার ব্যাংক লেনদেনের সময় আরও কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি যেসব এলাকা লকডাউন বা অবরুদ্ধ করা হয়েছে, ওই এলাকার ব্যাংক শাখা বন্ধ রাখতে বলেছে। নতুন সিদ্ধান্তনুযায়ী, সীমিত আকারের ব্যাংকিং সেবার আওতায় যেসব ব্যাংক শাখা খোলা রয়েছে, সেগুলোতে আগামী রোববার থেকে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক লেনদেন শাখা (এডি) আরও এক ঘণ্টা খোলা রাখতে পারবে। আর আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা ২টা পর্যন্ত।
শাখাগুলোতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোতে লেগে থাকছে উপচে পড়া ভিড়। বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য সরকারি ব্যাংক ও টাকা তোলার জন্য বেসরকারি ব্যাংকে বেশি ভিড় হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত ব্যাংক কর্মকর্তারা। অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থা করেনি, আবার ঝুঁকি ভাতাও দিচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে সেবা অব্যাহত রাখায় আলাদা স্বীকৃতিও চান কোন কোন ব্যাংক কর্মকর্তা।
সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর সীমিত আকারে ব্যাংক সেবা চালু রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টাকা জমা ও উত্তোলনের পাশাপাশি শুধু জরুরি বৈদেশিক লেনদেন চালুর কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৫ মার্চ জানায়, ডিডি ও পে অর্ডার সেবা চালুর কথা। এরপর ২ এপ্রিল লেনদেনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ট্রেজারি চালান জমা ও ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন বিভিন্ন সেবা চালুর ঘোষণা দেয়। এরপর সঞ্চয়পত্র নগদায়ন ও প্রতি মাসের মুনাফা তোলা, বৈদেশিক লেনদেন শাখাসমূহের সেবা দুপুর ২টা পর্যন্ত চালু রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে করোনা পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর সেবার সংখ্যা যেন ততই বাড়ছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোন দেশ করোনার কারণে ব্যাংক সেবা বন্ধ করেনি। এটা সম্ভবও না। কারণ এমন সংকটে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। বেতন-ভাতা উত্তোলন, জ্বালানি তেল বিক্রি,খাদ্য গুদামের খাদ্য সরবরাহ সবারই ব্যাংক সেবা প্রয়োজন হয়। বেশির ভাগ গ্রাহক এখনো ডিজিটাল সেবায়(এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং) অভ্যস্ত না।
এছাড়া, অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজেটিভ আসলেও পিসিআর ল্যাব রিপোর্টে নেগেটিভ এসেছে। এ কারণে লকডাউন প্রত্যাহার করেছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বৈঠক করে নিত্যপণ্য পরিবহন এবং সরবরাহে অন্তরায় আছে কিনা সে বিষয়ে তদারকিও করছে স্থানীয় প্রশাসন। আজ চাঁদপুরে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকের খবর নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ। তিনি অর্থসংবাদকে জানান, বৈঠকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয় নিত্যপন্যের সাপ্লাই চেইন যেন ঠিক থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। যেহেতু চাঁদপুর কয়েকটি জেলার ব্যবসায়িক ফোকাল পয়েন্ট, তাই এখানে যেন নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থার কোন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে সজাগ থাকারও তাগিদ দেন প্রশাসন। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে কোন সমস্যা না হয়, সে জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বলেও জানান চাঁদপুর চেম্বারের সহসভাপতি তমাল কুমার ঘোষ।