বুধবার রাতে দেওয়া জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিশ্বের ২০ লাখের বেশি মানুষের দেহে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আর এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার জনের।
তবে এই ২০ লাখই আক্রান্ত এমন ভাবতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা; তারা বলছেন, মৃদু সংক্রমণে লক্ষণ প্রকাশিত হয়নি, এমন অনেকেই রয়ে গেছে, পরীক্ষার আড়ালে। ফলে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখের অনেক বেশিই হবে।
এ্ই মহামারী সামলাতে বেসামাল বিশ্ববাসীর জন্য এই দুটি হতাশার তথ্যের সঙ্গে ইতিবাচক একটি তথ্যও এসেছে। তা হল আক্রান্ত ২০ লাখের মধ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন ভাইরাসের নামকরণের পর এতে সৃষ্ট রোগের নাম দেওয়া হয় কোভিড-১৯।
চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর গত ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা গেল, রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।
তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।
চীন সামলে উঠতে পারলেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠে ইউরোপে, স্পেন ও ইতালি রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়।
ইউরোপকে বিপর্যস্ত করে এখন করোনাভাইরাসের গ্রাসে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র; কয়েক দিনের ব্যবধানেই এখন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত কিংবা মৃত্যু দুই সংখ্যাই যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই বিপর্যয় ১৫ দিনের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২০ লাখে পৌঁছে গেল। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এই রোগীদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নিউ ইয়র্কে।
আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পেছনেই রয়েছে স্পেন, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার। ১ লাখ ৬২ হাজার আক্রান্ত নিয়ে তারপরই রয়েছে ইতালি।
যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইতালির পর ১ লাখের বেশি আক্রান্ত রয়েছে জার্মানি ও ফ্রান্সে, যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। ৫০ হাজারের বেশি রোগী ধরা পড়েছে চীন, ইরান ও তুরস্কে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি রোগী ধরা পড়েছে ভারতে, এই সংখ্যা এখন ১১ হাজারের বেশি। পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার, বাংলাদেশে ছাড়িয়েছে এক হাজার।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশ লকডাউনে যাওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ; তবে এতে পরিস্থিতির উন্নতির আভাসও মিলছে।
এই পর্যন্ত যে ৫ লাখ রোগী করোনাভাইরাস মুক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে চীনেরই সবচেয়ে বেশি। দেশটির ৭৮ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও সুস্থ হওয়ার দিক থেকে নাটকীয় সাফল্য দেখিয়েছে জার্মানি। দেশটির ৭২ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এই সংখ্যা চীনের পর সর্বাধিক।
স্পেনেও প্রায় ৭১ হাজার রোগী সেরে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ৫০ হাজার, ইরানে তা ৪৯ হাজার। ইতালিতে ৩৭ হাজার এবং ফ্রান্সে ২৯ হাজার জন সুস্থ হয়েছেন।
মৃতের সংখ্যায় এখনও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দেশটিতে এই পর্যন্ত ২৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস।
মৃতের সংখ্যায় তারপরে রয়েছে ইতালি, সেখানে মৃত্যু ঘটেছে ২১ হাজারের বেশি মানুষের। স্পেনে ১৮ হাজারের বেশি এবং ফ্রান্সে ১৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ হয়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে মারা গেছে প্রায় ৪০০ জন। পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা শত ছাড়িয়েছে, বাংলাদেশে সংখাটি পৌঁছেছে অর্ধশতে।