প্রতিশ্রুত সময়ের একদিন আগেও বেতন হাতে না পেয়ে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘লকডাউন’ ভেঙে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের আশ্বস্ত করতে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিজিএমইএ নেতারা।
বিজিএমইএর পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, তাদের তালিকাভুক্ত দুই হাজার ২৭৪টি রপ্তানিমুখী কারখানার মধ্যে এক হাজার ১৮৬টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। এর অর্থ হচ্ছে এক হাজার ৮৮টি কারখানা এখনও শ্রমিকের হাতে বেতন দেয়নি। যারা বেতন পরিশোধ করেছে তাদের অধিকাংশই বড় কারখানা।
বেতন পরিশোধ করেছে ঢাকার ৩৭২টির মধ্যে ২০১টি কারখানা, গাজীপুরের ৮১৮ কারখানার মধ্যে ৪৩২টি, সাভার আশুলিয়ার ৪৯১টি কারখানার মধ্যে ২৪৩টি, নারায়ণগঞ্জের ২৬৯টির মধ্যে ১১৮টি, চট্টগ্রামের ৩২৪টির মধ্যে ১৫৬টি এবং অন্যান্য এলাকার ৪২টির মধ্যে ৩৬টি কারখানা।
বিজিএমইএর দাবি, মোট ২৪ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ জন শ্রমিক বেতন পেয়েছেন, যা মোট শ্রমিকের ৭৮ শতাংশ।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, বুধবার পর্যন্ত যেসব কারখানা বেতন দিয়েছে সেখানে প্রতিটিতে গড়ে ১৬০০ করে শ্রমিক রয়েছে। আর যারা এখনও বেতন দেয়নি সেখানে প্রতিটিতে গড়ে ৫০০ এর মতো শ্রমিক রয়েছে।
বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার উত্তরায় সড়ক অবরোধে পোশাক শ্রমিকরা।বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার উত্তরায় সড়ক অবরোধে পোশাক শ্রমিকরা।সাধারণত মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই আগের মাসের বেতন পরিশোধ করে থাকে কারখানাগুলো। তবে চলমান বিশেষ পরিস্থিতিতে সর্বত্র ছুটির প্রভাব থাকায় ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে বলে সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মালিকরা।
সেই সময় শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগেও বেতনের দেখা পাননি কয়েক লাখ শ্রমিক। এর ফলে সৃষ্ট অসন্তোষের কারণে সাভার, গাজীপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শ্রমিকরা।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মানুষে মানুষে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মাঝেও সময়মতো বেতন না পেয়ে সম্মিলিত বিক্ষোভ দেখালেন শ্রমিকরা। তাদের ঘরে ফেরাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে পুলিশকে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক মাসের মাথায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে; মৃত্যু হয়েছে অর্ধশত মানুষের।
বিশ্বব্যাপী অচলাবস্থা সৃষ্টি করা এই মহামারীর কারণে বাংলাদেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ও রপ্তানি অনেকটাই থমকে গেছে।
সে কারণে ভবিষ্যতে কারখানাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদের (২ শতাংশ) ঋণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। রপ্তানি থমকে যাওয়ার এই সময়ে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে এই স্বল্প সুদের ঋণের টাকা খরচ করতে পারবেন মালিকরা। এর ফলে একদিকে যেমন শ্রমিকের চাকরিচ্যুতির ঝুঁকি কমবে অন্যদিকে শিল্পগুলোও তাদের টিকে থাকার প্রচেষ্টায় রশদ পাবে- সেই চিন্তা থেকে সরকারি এই প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।