মা-বাবা নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে সন্তানদেরকে শহরে পাঠান স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শিখতে। এমনকি মায়ের শেষ স্মৃতিটুকুও বিক্রি করে দেয় সন্তানের জীবন আলোকিত করতে। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সন্তান নিজের জীবনকে অনন্য উচ্চতায় পৌছে নিবে এমনটাই চাওয়া তাদের।
সন্তান যাতে পৃথীবিতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, তার জন্য সবকিছু করে মা-বাবা। আমরা প্রথম দিকে ঠিকই তাদের আত্মত্যাগকে মনে রাখি। আমাদের সবোর্চ্চ চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। এক সময় সফল ও প্রতিষ্ঠিত হই। তখন আর মনে পড়ে না সেই মুখগুলোকে। তাদের তখন আমাদের কাছে বোঝা মনে হয় নয়তো সময় থাকেনা তাদের জন্য।
মাঝেমাঝেই পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রম থেকে বৃদ্ধ মা-বাবার চিঠি তার ব্যস্ত সন্তানদের কাছে। যা পড়ে চোখের পানি সংবরণ করা যায় না। মানবতার প্রতি এ এক চরম উপহাস। বর্তমান সময়ে সবকিছু থাকতেও সন্তানহারা এতিম হয়ে জীবন যাপন করছেন অনেক মা-বাবা।
আজ আমরা চাকরি করে, ব্যবসা করে বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছি। অনেক সুনাম অর্জন করছি। তারপর বিয়ে করে নতুন সংসার নিয়ে আলাদাভাবে থাকছি। অন্যদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা কি খাচ্ছে, কি পরছে, জটিল ও কঠিন রোগে ভোগছে সেদিকে বিন্দুমাত্র কোনো খেয়াল নেই।
বর্তমানে বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। আর এর পরিণতিতে তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সন্তানরা। এসব মা-বাবাকে দেখে মনে হয় তারা সুখেই আছেন। কিন্তু তাদের মনের কষ্টগুলো ঠিকই প্রকাশ পায়। তারা নিজের পরিবারের কাছে আসতে চায়। তারা থাকতে চান ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে। শত মান-অভিমান থাকা সত্ত্বেও অপমান, অযত্ন, অবহেলা করা নাড়িছেঁড়া সন্তানটিকে যে মা কখনোই ভুলতে পারেন না। কিন্তু সেই নিষ্ঠুর সন্তানটি কি মাকে একবার মনে করে!
যে মা সন্তানকে একদিন না দেখে থাকতে পারতেন না, সে সন্তান আজ মাকে ছাড়া খুব আনন্দে দিন পার করছে। এই মা একদিন নিজে না খেয়ে সন্তানে মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। এখন যে মা-বাবা বৃদ্ধ, তাঁদের ধনসম্পদ বিনিয়োগ করেছেন সন্তানদের পেছনে। তাদের মূলবান সময়ের সবটুকুই ব্যয় করেছেন সন্তানদের জন্য।
আজ এসব মা-বাবাদের অর্থের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন ভালোবাসা ও মমতার। আমরা কি তাদের শোনাতে পারিনা একটু মধুর বাণী? দিতে কি পারি সম্মান আর গুরুত্ব?