দায়িত্বে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মহল বিশেষের অশুভ স্বার্থ হাসিল করাকে দুর্নীতি বোঝায়। নিজের কাজটি সহযে করানোর জন্য অনেকে ঘুষ দিয়ে থাকে। আবার অনেককে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়। এসকল কর্মকান্ড দুর্নীতির আওতাভুক্ত।
উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো, মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় যোগাযোগ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বড় আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যেন টিকে থাকতে পারে, এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয়। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের অর্থায়ন প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করা।
দুর্নীতির প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করে ক্ষমতা। মানুষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সৃষ্টি হয় ধনী-গরিবের বৈষম্য। ফলে আর্থিক কষ্টে ভোগে সাধারণ মানুষ।
করোনার মধ্যে মানুষ খুব অসহায় জীবনযাপন করছে। এসময় পৃথিবীর সব দেশই বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারও কয়েকবার প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। তবে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রণোদনা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের খবর দেখা গেছে। যা অসহায় মানুষের জন্য একেবারেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম হারে প্রণোদনা দেওয়ার তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম।
খবরের কাগজে প্রায়ই দেখা যায় ব্যাংকের টাকা আত্মসাত ও শেয়ারবাজার লুটপাটের খবর। মানুষ ব্যাংকে নিরাপদ মনে করে টাকা রাখে। কিন্ত কিছু অসাধু ব্যাক্তি সুযোগ বুঝে এসব গচ্ছিত অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ ক্ষমতাকে অনৈতিক কাজে অপব্যবহার করে। যা একটি দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। এসব দুর্নীতি রুখতে দরকার আইনের সঠিক ব্যবহার।
এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভিন্ন বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে অনেক দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য ও রেল খাত অন্যতম। এসব দুর্নীতির ব্যাপারে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, অবৈধভাবে নদী দখল, ভূমি রেজিস্ট্রেশনে দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাত ও ওষুধশিল্পে দুর্নীতির খবর। এসব দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছেন অনেকে।
তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০২১ সালের 'দুর্নীতির ধারণা সূচকে' বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশে এক ধাপ এগিয়েছে। সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম হলেও এই বছর হয়েছে ১৩তম। আর বিশ্বের কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আগের বছর বাংলাদেশ ১৪৮তম দেশ হলেও এই বছর হয়েছে ১৪৭।
সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে কমে আসবে দেশের দুর্নীতির পরিমাণ। উন্নয়নের উচ্চ শিখড়ে পৌছাবে আমাদের দেশ। পুরোপুরিভাবে দেশের সকল মানুষ আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করবে। এগিয়ে যাবে দেশ ও জাতি।