আবার পণ্য রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটায় চাপে পড়েছে রাশিয়াও। কিন্তু অর্থনৈতিক এসব চাপ রাশিয়াকে কতটুকু কোণঠাসা করবে? উত্তর পেতে হলে জানতে হবে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান সম্পর্কে।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। দেশটিতে প্রতিদিন ১১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়। রপ্তানিতে সৌদি আরবের পরেই দেশটির অবস্থান। সৌদি আরবের অর্ধেকের বেশি তেল বিক্রি হয় এশিয়ায়। বাকিটা যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে। আর রাশিয়ার তেলের বড় গ্রাহক ইউরোপ। বছরে ৪০০ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনকারী রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কয়লা রপ্তানিকারক দেশ। তবে চলমান নিষেধাজ্ঞা বেশি দিন কার্যকর থাকলে তা রাশিয়ার বর্তমান তেল ও কয়লার বাজার নষ্ট করে অন্য প্রতিযোগীদের সুযোগ করে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইউরোপের গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ করে রাশিয়া। এ জন্য ইউক্রেনে অভিযানের পর ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রধানতম রক্ষাকবচ গ্যাস রপ্তানি। কিন্তু যেভাবে শক্তিধর দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে, তাতে গ্যাসের সরবরাহ ও দাম নিয়ে অসুবিধায় পরবে সব পক্ষই।
অস্ট্রেলিয়া ও চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। রাশিয়ার খনিমালিকেরা সাধারণত উৎপাদিত সোনা দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে। কিন্তু বেশ কয়েকটি রাশিয়ান ব্যাংক এখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। ফলে সোনা বিক্রি নিয়েও শঙ্কায় আছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হীরা উৎপাদনকারী কোম্পানি আলরোসা গত বছর একাই বিশ্বের ৩০ শতাংশ হীরা উৎপাদন করেছে, যার অধিকাংশ রপ্তানি হয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিশ্বের প্রধান গম সরবরাহকারী দেশ। দুই দেশ মিলে বৈশ্বিক গম রপ্তানির ২৯ শতাংশ পূরণ করে, যার অধিকাংশ যায় কৃষ্ণসাগরের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্তবর্তী আজভ সাগরে পণ্যবাহী জাহাজের চলাচল ইতিমধ্যেই বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্যপণ্য সরবরাহ।
বিশ্ব ইস্পাত অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইস্পাতের ৪ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে, যার প্রায় অর্ধেকের রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ। বিশ্বের মোট অ্যালুমিনিয়ামের প্রায় ৬ শতাংশ উৎপাদন করে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান রুসাল। গত বছর প্রায় ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন করেছে সংস্থাটি। ইউরোপ,এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা হলো রুসালের প্রধান বাজার।
তবে সব ধরনের পণ্য রপ্তানি নিয়েই সংকটে পড়েছে রাশিয়া। কারণ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে আমদানিকারকেরা অর্থ লেনদেনে বাধার মুখে পড়েছেন। আবার রাশিয়ার কাছ থেকে পণ্য কিনে পশ্চিমা জোটের বিরাগভাজন হওয়ারও ভয়ে আছে অনেক দেশ। ফলে চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে আমদানিকারকেরা রাশিয়া ছেড়ে অন্য দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বিকল্প সরবরাহ খুঁজতে শুরু করবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে রাশিয়া।