ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। ঢালাওভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করায় এ বিষয়ে ইইউ পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছু ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর ক্রয়াদেশ বাতিল ও মূল্য কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ধরনের অনৈতিক ও অস্বস্তিকর পদক্ষেপ পোশাক ব্যবসার নৈতিকতার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উপরন্তু এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চেতনার পরিপন্থী বলে চিঠিতে উল্লেখ করে এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে ইইউ পার্লামেন্টের কমিটি অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (আইএনটিএ) হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
গত ১৩ মে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ও কমিটি অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (আইএনটিএ) চেয়ার মি. ব্রান্ড ল্যাঞ্জের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।
চিঠিতে আইএনটিএর চেয়ারকে উদ্দেশ করে বলা হয়, কোভিড-১৯ বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং রফতানিভিত্তিক তৈরি পোশাক কারখানায় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দেশের রফতানি আয়ের ৮০ ভাগই আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। এ মুহূর্তে এই খাতটিকে পর্যাপ্ত সহায়তা না দিলে ধস পড়তে পারে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পোশাকখাতকে চাঙ্গা করতে নানামুখী উদ্দীপনা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে। তবে এটি ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের পক্ষে যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যার বেশিরভাগই নারী শ্রমিক-দেশের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আমরা বুঝতে পারি যে, মহামারিটি (কোভিড-১৯) ইউরোপীয় অনেক ব্যবসায়ও ক্ষতি করেছে। এই বিরাট চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা ইইউর সহযোগিতা চাই। বিশেষ করে নীতিগত ও মানভিত্তিক বাণিজ্য এবং সবার জন্য দায়বদ্ধ ব্যবসা পরিচালনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইইউ ভূমিকা রাখবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এই চিঠি এমন একসময়ে দেয়া হয়েছে, যখন দেশের রফতানি আয়ের বিপর্যয় ঠেকাতে তিনদিন আগে একটি সভা করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ওই সভায় পোশাকখাতের ক্রয়াদেশ বাতিলের বিষয়ে ক্রেতাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে তাদের এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানার প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। এসব কারখানায় মোট ২০ লাখ ১৬ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। পরবর্তীতে কিছু কোম্পানি পোশাক (যা এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে) নেয়ার ঘোষণা দিলেও মূল্য কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। অনেক শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক কারখানা।