স্ট্রোকের আগে বাহু দুর্বলতা, মুখ ঝুলে যাওয়া ও কথা বলার অসুবিধা দেখা দেয় আর হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বুকে অস্বস্তি ও ব্যথা, শরীরের উপরের অংশে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডাতেও ঘাম, বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো হলো- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ নিম্ন-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান, স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা।
স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাককে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। এর কারণ হলো এই দুটি রোগই সব সময় লক্ষণ বা প্রাথমিক উপসর্গ দেখায় না। ফলে এতে আক্রান্ত রোগীকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না দেওয়া হলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ মানুষেরা এ দুটি রোগের লক্ষণ অবহেলা করেন কিংবা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যান। ফলে রোগীকে আর পরবর্তী সময়ে বাঁচানো যায় না।
স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় যে কারণ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এই দুটি কারণ হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ‘উল্লেখযোগ্য’ পূর্বাভাস হতে পারে।
এই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী লেখক কমিটির সভাপতি ক্রিস্টাল উইলি সিনে বলেছেন, ‘চার দশকেরও বেশি সময় নিয়ে করা এই গবেষণায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব উভয়ই স্বাস্থ্যের প্রতিকূল ফলাফলের সঙ্গে জড়িত।’
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
গবেষকদের মতে, প্রিয়জন হারানো ও অবসর গ্রহণসহ বিভিন্ন কারণসহ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব বাড়ছে অনেকের মধ্যেই। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও অল্প বয়সীরাও একাকীত্বের ঝুঁকিতে ছিলেন।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জরিপ অনুসারে, জেনারেশন জেড-এর সদস্যদের অর্থাৎ ১৮-২২ বছরের প্রাপ্তবয়স্করা এখন নিঃসঙ্গতম প্রজন্ম হিসেবে বিবেচিত। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা দায়ী করছেন অর্থপূর্ণ সামাজিক ক্রিয়াকলাপে কম ব্যস্ততা ও সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার বাড়ানোকে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বের মধ্যে পার্থক্য কী?
অধ্যয়নের লেখক সিনে বলেছেন, ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব বোধ একই বিষয় নয়। যেমন- অনেক ব্যক্তিই বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করলেও তারা কিন্তু একাকীত্ব বোধ করেন না, অন্যদিকে অনেকে সমাজে বিভিন্ন মানুষ কিংবা পরিবারের সঙ্গে বাস করেও নিঃসঙ্গতা কিংবা একাকীত্বে ভোগেন।’
একাকীত্ব হলো, একা থাকা ও মানুষের সঙ্গে কম যোগাযোগের কষ্টকর অনুভূতি। আর সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হলো সামাজিক যোগাযোগের অভাব বা মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা মিথস্ক্রিয়া না থাকা।
গবেষকদের মতে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত সবারই, কারণ এগুলো স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বে বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সঠিক জীবনযাত্রার প্রতিও গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য আরও দায়ী ভুল খাদ্যাভ্যাস, শারীরচর্চার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস। এ বিষয়ে গবেষকরা পরামর্শ দেন, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন ত্যাগ করুন। তাহলেই আপনি সুস্থ থাকবেন ও হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমবে।