তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় চামড়া শিল্পে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করবেন।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, জণনিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহেদ আলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রমেশ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল আযহায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মসজিদের ইমাম, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া ছড়ানোয় জড়িতদের চামড়া ছড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
সভায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদুল আযহার কয়েকদিন পূর্ব হতে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, হাজারিবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি হতে রাজউকের ‘রেড জোন’ প্রত্যাহার হলে মালিকদের ঋণ পেতে সুবিধা হবে। ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত সম্ভব না হলে আসন্ন ঈদে চামড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে আশংকা করেন তিনি।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, কওমি মাদরাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত এবং এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদরাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এ লক্ষ্যে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বলেন, আসন্ন ঈদুল আযহার পূর্বেই ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সাহায্য নিশ্চিত করা হবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ, তফসিলভুক্ত ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ, চামড়া শিল্প সম্পর্কিত ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই সভা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ এনডিসি বলেন, ঈদের পরের তিনমাস চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় ট্যানারিগুলোতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার হলে সিইটিপির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে ট্যানারিগুলো লেদারের ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট অর্জনে ব্যর্থ হবে।
তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে এবং কোরবানির সময় লবণের কোথাও কোনো ঘাটতি হবে না। সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর সিটিপির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিল্পনগরীতে অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহেদ আলী বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে ভারত থেকে অবৈধ গবাদি পশু আসা এবং পশুর চামড়া চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের দিন ও পরদিন চামড়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এ সময় যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, সে বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিসমূহে বর্তমানে প্রায় ৪০০-৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণ সহায়তার নিশ্চিত ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের পক্ষে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। তিনি বিষয়টি সুরাহার জন্য টাস্কফোর্স সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।