নিজস্ব বিদ্যুতে চলে শিল্প-কারখানা

নিজস্ব বিদ্যুতে চলে শিল্প-কারখানা
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে উৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপনা রয়েছে ৪৬ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে ৪০ হাজারের কিছু বেশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। বাকি ছয় হাজার বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প। আর সব শিল্পের বড় অংশই সচল থাকে বিদ্যুতের নিজস্ব উৎপাদন বা ক্যাপটিভ ব্যবস্থায়। কারণ হিসেবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, ব্যয়ভারের চেয়েও বড় সমস্যা হলো সেটি নিরবচ্ছিন্ন নয়। ফলে শিল্পের লাইফলাইন বা শিল্প চলে মূলত ক্যাপটিভেই।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন সাড়ে ২৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। জাতীয় গ্রিডবহির্ভূত উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো, যার মধ্যে ক্যাপটিভের সক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ৮ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গত এক দশকেরও বেশি সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ায় জাতীয় গ্রিডে আস্থা পাচ্ছে না শিল্প খাত। নিজস্ব বিদ্যুিনর্ভরতাও তাই ক্রমে বাড়ছে।

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত থাকলেও শিল্প মালিকরা তাতে খুব একটা আগ্রহী হন না। আবার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে দাম গুনতে হয় দ্বিগুণেরও বেশি। এসব কারণে জাতীয় গ্রিডের চেয়ে ক্যাপটিভেই এখনো নির্ভরতা শিল্প মালিকদের। কিন্তু সেই ক্যাপটিভ এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিচ্ছে। একদিকে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার ভোগান্তি—গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন যেমন না, আবার ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধও থাকছে। অন্যদিকে আবার গ্যাসের দামও বহুগুণ বেড়েছে। ফলে শিল্পের লাইফলাইন ক্যাপটিভ হলেও এ ব্যবস্থার সুফল পাওয়া থেকে ক্রমেই দূরে সরে যেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প মূলত ক্যাপটিভেই চলে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলোর অনেকে কম হলেও ক্যাপটিভ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। একটা সময় ছিল যখন বিদ্যুতের সংকট ছিল। ফলে সরকারের উৎসাহ ছিল উদ্যোক্তাদের ক্যাপটিভ ব্যবস্থা গড়ে তোলার। সে উৎসাহের ওপর ভিত্তি করেই ব্যক্তি খাতের শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ক্রমে বাড়লেও সরবরাহ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। এজন্যই ব্যয়ভার, গ্যাসের চাপজনিত সমস্যা থাকলেও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ভরসা রাখছে শিল্প খাত। কিন্তু বর্তমানে ক্যাপটিভে উৎপাদনও কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্তমানে ক্যাপটিভ বিদ্যুতের ব্যয় যে পর্যায়ে গেছে শিল্প সংকুচিত হওয়া ছাড়া পথ থাকবে না। তবে গ্রিড বা ক্যাপটিভ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে জ্বালানি লাগবেই। কেননা গ্রিডের বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি।’

একই মত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশই ব্যবহার করে শিল্প। জাতীয় গ্রিডেও উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু শিল্প খাত সেটা ব্যবহার করছে না, কারণ গ্রহণযোগ্য নয়। সঞ্চালন ও সরবরাহের পাশাপাশি ফুয়েল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে গ্রহণযোগ্য করা যেত। যেহেতু টেকসই নয়, তাই জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ শিল্প তেমন ব্যবহার করছে না। শিল্প চায় গুণগত মান ও গ্রহণযোগ্যতা। গ্যাস দিয়ে দিলে নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থায়ই তারা আস্থা রাখছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ‘সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো ক্যাপটিভ থেকে সরে আসবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা মূলত আমদানিনির্ভরতাকে ঘিরে। পুরো বিদ্যুৎ খাত পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোচ্ছে। সমস্যা হলো আমদানিনির্ভরতার পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগছে না আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতি বিদ্যুৎ খাতের ব্যর্থতা নয়। আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণেই এ সংকট।’

সূত্র জানিয়েছে, দেশে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চটি মূলত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল সুতা-কাপড়ের উৎপাদনকারী বস্ত্র শিল্প মালিকদের। এ শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, যারা ক্যাপটিভনির্ভর শিল্প তাদের বাস্তবতা হলো জ্বালানি উৎস সেই একটিই, গ্যাস। এখন যে দামে জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে, সেটা সমন্বয় করা হচ্ছে। যেহেতু গ্যাসের সংকট, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। শিল্পের খুব কম উদ্যোক্তারই দুই ধরনের জ্বালানি উৎস আছে। কাজেই যাদের ক্যাপটিভ, তাদের যদি গ্যাস সরবরাহ না থাকে, তাহলে উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এখনই রেশনিং করে চলতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘ক্যাপটিভ অবশ্যই শিল্পের লাইফলাইন। বস্ত্র খাত ও ক্যাপটিভ মিলিয়ে গোটা শিল্পে গ্যাসের ব্যবহার ৩৫ শতাংশ। বাকি পুরোটাই সরকারের বিভিন্ন খাতে। ১৬ টাকার গ্যাস এখন হয়েছে ৩০ টাকা। অর্থাৎ আগে মাসে বিল ছিল ২ কোটি টাকা, এখন হয়ে গেল ৪ কোটি। এতে শিল্পপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা, আমরা সেটা ভাবছি।’

অর্থসংবাদ/কেএ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি