উত্তরায় রাজ্জাকের বাণিজ্যিক ভবন রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স আশপাশের গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে পরিবারের পক্ষ থেকে। মার্কেটের মসজিদে থাকছে দোয়ার আয়োজন। পাশাপাশি বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া পড়া হবে। এ তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানান অভিনেতার ছেলে সম্রাট।
এ ছাড়া চলচ্চিত্রের একাধিক সংগঠন বনানী কবরস্থানে ফুল দিয়ে রাজ্জাকের প্রতি সম্মান জানিয়েছে। শনিবার শিল্পী সমিতি এফডিসিতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন রেখেছে। কয়েক দিন পর দোয়ার আয়োজন করবে প্রযোজক সমিতি।
প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অভিনয় করেন রাজ্জাক। তিন শতাধিক সিনেমার মাধ্যমে ঋদ্ধ করেছেন দেশের বিনোদন অঙ্গনকে। পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে তার আলাদা খ্যাতি ছিল। নির্মাণের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সাহিত্য ও সামাজিক গল্প। বরাবরই সমাজ সচেতন থেকেছেন তিনি।
মারদাঙ্গা ছবি করেননি এমন নয়, দেশের প্রথম অ্যাকশন সিনেমা ‘রংবাজ’-এর নায়ক তিনি, তারপরও দর্শক তার পারিবারিক ও রোমান্টিক অবয়বটি মনে রেখেছেন। এ কারণে হয়তো ঢাকার সিনেমার প্রধান ব্র্যান্ড রাজ্জাক।
তার পারিবারিক নাম আব্দুর রাজ্জাক। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে পর্দায় এ নামেই দেখা যেতো।
রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। সিনেমার নায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছিল শুরু থেকে। স্থানীয় মঞ্চে অভিনয় করেন। ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়ে অভিনয়ের ওপর কোর্স করেন। এরপর কলকাতায় ফিরে দুটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কবলে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন।
তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় এসেও রাজ্জাক চলচ্চিত্রের নায়ক হওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। প্রথমে ‘উজালা’ সিনেমাতে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে এ নির্মাতার অনেক স্মরণীয় সিনেমার নায়ক হন তিনি।
১৯৬০-এর দশকে সালাউদ্দিন পরিচালিত হাসির সিনেমা ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রাজ্জাক ঢাকায় অভিনয় জীবনের সূচনা করেন। এরপর জহির রায়হান ‘বেহুলা’য় লখিন্দর চরিত্রে সুযোগ দেন, বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা। এ ছবিতে নায়িকার ভূমিকা বড় হলেও রাজ্জাককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে নীল আকাশের নিচে, ময়নামতি, মধু মিলন, পিচ ঢালা পথ, যে আগুনে পুড়ি, জীবন থেকে নেয়া, কী যে করি, অবুঝ মন, রংবাজ, বেঈমান, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, অনন্ত প্রেম, বাদী থেকে বেগম ইত্যাদি।
দীর্ঘ-বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে সুচন্দা, কবরী, শাবানা ও ববিতার সঙ্গে জুটি গড়ে তুলেছিলেন রাজ্জাক। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও অন্যান্য সম্মাননা।