২০২২ সালের অক্টোবরে দশম স্টুডিও অ্যালবাম 'মিডনাইটস' মুক্তির পর, টেইলর সুইফট ইতিহাসের প্রথম শিল্পী হিসেবে বিলবোর্ডের ১০০ গানের তালিকায় শীর্ষ দশে নিজের জায়গা করে নেন।
এর মাসখানেক পরে, টেইলরের ১৪ মিলিয়ন ভক্ত তার ২০২৩ 'ইরাস' ট্যুরের টিকিট কেনার জন্য একরকমের যুদ্ধই শুরু করেছিলেন। টিকিটের অতিরিক্ত চাহিদায় টিকিট বিক্রির সাইট টিকিটমাস্টারের সাথে সমস্যাও তৈরি হয় ভক্তদের। পরবর্তীতে মার্কিন বিচার বিভাগ এ নিয়ে একটি তদন্তও শুরু করে।
সর্বোচ্চ আয় করা তারকাদের তালিকায় ১২ বারের গ্র্যামি বিজয়ী টেইলর সুইফট এবার নবম স্থানে রয়েছেন। ২০১৯ সালে শীর্ষ স্থান দখলের পাশাপাশি এ নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো তিনি এই তালিকায় আছেন।
টেইলর সুইফটের জন্য এ বছরটা দুর্দান্ত কাটলেও তাকে ছাড়িয়ে গেছেন কিছু বুড়ো রক শিল্পী। রোলিং স্টোন্স এবার তাদের ইউরোপিয়ান সিক্সটি ট্যুর থেকে প্রায় ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। জেনেসিস এবার প্রথমবারের মতো দখল করেছে শীর্ষস্থান। তাদের ট্যুর আনুমানিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আয় হয়েছে।
দ্য সিম্পসন শো-টি প্রথম সম্প্রচারের ৩৪ বছর পর তালিকায় পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে। মূলত ২০১৯ সালে ডিজনি+ কে সম্প্রচার চুক্তি দেওয়ার পর তারা সেখান থেকে বার্ষিক ১০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছে।
'নেভার বেট এগেইনস্ট' এর পরিচালক জেমস ক্যামেরুন ১২ বছর পর আবার শীর্ষ দশে ফিরে এসেছেন। তার অবতার সিনেমার সিক্যুয়েল 'দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার', ডিসেম্বরে মুক্তির পর থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন আয় করেছে এবং এখনও প্রেক্ষাগৃহে চলছে।
শীর্ষ দশ উপার্জনকারীদের মধ্যে বক্স অফিস তারকা আছেন মাত্র দুই জন– টাইলার পেরি ও ব্র্যাড পিট। তবে তাদের বেশিরভাগ অর্থই আসে অফ স্ক্রিন থেকে।
ব্র্যাড পিট, ২০০৯ সাল থেকে শীর্ষ দশের বাইরে। ডিসেম্বরের একটি চুক্তিতে তার প্রযোজনা সংস্থা, প্ল্যান বি-তে বেশিরভাগ অংশীদারিত্ব ইউরোপীয় মিডিয়া সংস্থা মিডিয়াওয়ানের কাছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে। আয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এসেছে বুলেট ট্রেন, ব্যাবিলন এবং দ্য লস্ট সিটির মতো চলচ্চিত্রে তার ভূমিকা থেকে।
এ বছরের তালিকায় একমাত্র নতুন মুখ পুয়ের্তো রিকান র্যাপার ব্যাড বানি। কনসার্ট ট্র্যাকার পোলস্টারের মতে, তিনি তার দুটি ট্যুরের জন্য টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। আর তার দ্বিতীয় ট্যুর 'দ্য ওয়ার্ল্ডস হটেস্ট' এ ৩৫ থেকে ৪০টি ট্রাক এবং একটি বোয়িং-৭৪৭ কার্গো জেটসহ তিনটি বিমান ব্যবহার করে আলোচনায় আসেন।
১. জেনেসিস- (২৩০ মিলিয়ন ডলার)
প্রোগ্রেসিভ রক জনরার এ কিংবদন্তী কনকর্ড মিউজিক গ্রুপের কাছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে স্বত্ব বিক্রি করে এ তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন। এ চুক্তির মধ্যে জেনেসিসের জন্য প্রকাশ স্বত্ব এবং রেকর্ড করা সঙ্গীত থেকে উপার্জন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এটি ফিল কলিন্স (তার হিট 'ইন দ্য এয়ার টুনাইট' সহ) এবং তার ব্যান্ডমেট টনি ব্যাঙ্কস এবং মাইক রাদারফোর্ডের একক উপার্জনকেও অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের সামগ্রিক আয় ট্যুরিং এবং রেকর্ড করা মিউজিক রয়্যালটি থেকে এসেছে।
২. স্টিং- (২১০ মিলিয়ন ডলার)
'এভ্রি ব্রেথ ইউ টেইক' ও 'রোক্সান' গানের জন্য বিখ্যাত ১৭ বারের গ্র্যামি জয়ী পুলিশ ব্যান্ডের সাবেক এই ফ্রন্টম্যান অবস্থান করছেন দ্বিতীয় স্থানে। তার উপার্জিত ৩০০ মিলিয়ন ডলার ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের কাছে একক এবং দ্য পুলিশ হিটসহ তার সম্পূর্ণ সঙ্গীত স্বত্ব বিক্রি করে এসেছে।
৩. টাইলার পেরি- (১৭৫ মিলিয়ন ডলার)
একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, লেখক টাইলার পেরি আছেন তৃতীয় স্থানে। তার উপার্জনের বেশিরভাগ আসে চলচ্চিত্র, টিভি শো এবং আটলান্টায় তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ব্যাকলট থেকে। ফোর্বসের শীর্ষ ১০ ধনী বিনোদনকারীদের তালিকায় তার দ্বিতীয় বছরে পেরি আনুমানিক এক বিলিয়ন ডলার নিয়ে একমাত্র বিলিয়নিয়ার হিসেবে তালিকায় ছিলেন।
৪. ট্রে পার্কার ও ম্যাট স্টোন – (১৬০ মিলিয়ন ডলার)
সাউথ পার্কের নির্মাতাদের জন্যও এটি একটি দুর্দান্ত বছর ছিল। তাদের আয়ের মূল উৎস এইচবিও ম্যাক্স চুক্তি, বুক অফ মরমন নামক একটি মিউজিক্যাল কমেডি। তবে তাদের আয়ের সিংহভাগ আসে ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত প্যারামাউন্ট চুক্তি থেকে, যা টাকার অংকে প্রায় ৯৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫. জেমস এল. ব্রুক্স ও ম্যাট গ্রোনিং– (১০৫ মিলিয়ন ডলার)
২০১৯ সালে ফক্স কোম্পানিকে ডিজনি ৫২ বিলিয়ন দিয়ে কিনে নেওয়ার পর আমেরিকান কার্টুন 'দ্য সিম্পসন্স' তাদের সকল সম্প্রচার ডিজনি+ (প্লাস) থেকে শুরু করেছে। সিরিজের সহ-নির্মাতা, ব্রুকস এবং গ্রোইনিং, স্ট্রিমিং চুক্তি থেকে ফি বাবদ বাৎসরিক ১০৫ মিলিয়ন ডলার আয় করছেন।
৬. ব্র্যাড পিট- (১০০ মিলিয়ন ডলার)
ব্র্যাড পিট আছেন এই তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। ডিসেম্বরে তিনি তার প্রযোজনা সংস্থা, প্ল্যান বি-এর বেশিরভাগ বিক্রি করে প্রায় ১১৩ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেন। মুনলাইট ও টুয়েলভ ইয়ার্স অ্যা স্লেভের মতো অস্কার জয়ী চলচ্চিত্রের কারণে হলিউডে অনেকেই প্ল্যান-বিকে একটি মূল্যবান ব্র্যান্ড হিসেবে দেখছেন। প্ল্যান বি চুক্তি ছাড়াও ব্র্যাড পিট বুলেট ট্রেন, ব্যাবিলন এবং দ্য লস্ট সিটিতে তার অভিনয় থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছেন।
৭. রোলিং স্টোন্স- (৯৮ মিলিয়ন ডলার)
মিক জ্যাগার, কিথ রিচার্ডস, এবং বাকি রোলিং স্টোনস সদস্যারা গত গ্রীষ্মে ইউরোপ থেকে মোটা অঙ্কের আয় করেছেন। কনসার্ট ট্র্যাকার পোলস্টারের রিপোর্ট অনুসারে, ইউরোপ জুড়ে তাদের ১৫টি শহরের কনসার্ট ট্যুর থেকে প্রায় ১৩৬ মিলিয়ন ডলার তাদের পকেটে ঢুকেছে, গড়ে প্রতিরাতে প্রায় সাড়ে আট মিলিয়ন ডলার করে।
৮. জেমস ক্যামেরুন– (৯৫ মিলিয়ন ডলার)
বক্স অফিসে ঝড় তোলা 'অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার' এরজন্য এবারও জেমস ক্যামেরুন ভালো আয় করেছেন। 'অবতার' (২০০৯) এবং 'টাইটানিক' (১৯৯৭) সহ সর্বকালের সর্বাধিক আয় করা তিনটি সিনেমার পরিচালক হিসেবে, জেমস এবার আয় করেছেন অন্তত ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯. টেইলর সুইফট– (৯২ মিলিয়ন ডলার)
টেইলর সুইফটের উপার্জন বিভিন্ন উৎস থেকে আসে– যার মধ্যে রয়েছে ফিজিক্যাল রেকর্ড বিক্রি, স্পটিফাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিমিং, ডিজিটাল ডাউনলোড, লাইসেন্সিং এবং সিঙ্ক। নভেম্বরে তার 'মিডনাইটস' ট্যুরের অপ্রতিরোধ্য চাহিদা, টিকিটমাস্টার সাইটকে ক্র্যাশ করেছিল। ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত তার আয় ৯২ মিলিয়ন ডলারের মতো থাকলেও বিলবোর্ডের তথ্য মতে, বছর শেষে 'ইরাস ট্যুর', কনসার্ট মার্চেন্ডাইজসহ সবকিছু মিলিয়ে তার আয় ২ বিলিয়নে পৌঁছেছে।
তাই ধারণা করা যায়, ২০২৩ এ নবম স্থানে থাকলেও ২০২৪ এর শীর্ষ ধনী তারকার শীর্ষে থাকতে পারেন তিনি।
১০. ব্যাড বানি– (৮৮ মিলিয়ন ডলার)
এবারের তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছেন পুয়ের্তো রিকান র্যাপার, ব্যাড বানি। তার আয়ের সিংহভাগ অর্থ এসেছে দুটি ট্যুর, 'অ্যারেনাসে এল উল্টিমো ট্যুর দেল মুন্ডো' এবং বিশাল স্টেডিয়ামে 'দ্য ওয়ার্ল্ডস হটেস্ট ট্যুর' থেকে। এছাড়াও, তিনি করোনা, চিটোস এবং অ্যাডিডাস থেকে এন্ডোর্সমেনন্টের মাধ্যমেও তার আয় বাড়িয়েছেন।