তবে ভারতে আরও আগে থেকেই আইফোন উৎপাদিত হচ্ছে। আরও পাঁচ বছর আগে থেকে সেখানে আইফোন সংযোজন করছে অ্যাপলের আরেক ঠিকাদার উইসট্রন।
বাণিজ্য যুদ্ধের জের এখনো চলছে। মাঝে কোভিড-১৯ এবং এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিষয়টি কিছুটা ধামাচাপা পড়ে গেলেও তা ছাইচাপা আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। সে জন্য বর্তমানে চীনে যেসব প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের কাছে ৩০০ একর জমিতে এ কারখানা স্থাপন করবে তাইওয়ানের কোম্পানি ফক্সকন। কারখানাটিতে আইফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে। সেখানে অ্যাপলের হ্যান্ডসেট সংযোজনও করা হতে পারে।
এখানেই শেষ নয়, ফক্সকন এ কারখানায় বৈদ্যুতিক গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করবে, এমন খবরও পাওয়া গেছে।
নতুন কারখানায় ভারতে এক লাখের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। যেখানে চীনের ঝেংঝুতে অবস্থিত আইফোন কারখানায় বর্তমানে দুই লাখের বেশি কর্মী কাজ করছেন। এ ছাড়া চাহিদা বাড়লে কারখানার কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, অ্যাপল আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আইফোন ভারতে উৎপাদন করবে। অর্থাৎ, ভারত হয়ে উঠবে আইফোনের প্রধান সরবরাহকারী।
ফ্রিমালয়েশিয়াটুডে বলছে, ফক্সকনের এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই দ্রুত সময়ের মধ্যে চীন থেকে কার্যক্রম সরিয়ে নেবে।
এদিকে ভারত সরকারও বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযাগ নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠন করেছে। মোট ১৪টি শিল্পের জন্য আগামী পাঁচ বছর এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং এবং তাইওয়ানের ফক্সকন এ তহবিলের সুবিধা নিয়ে ভারতের মুঠোফোন উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে।
শুধু বিদেশি কোম্পানি নয়, ভারতীয় কোম্পানি ওলা এ সুবিধা নিচ্ছে। বেঙ্গালুরু শহরের ৯০ কিলোমিটার দূরে একটি বৃহৎ স্কুটার কারখানা স্থাপন করেছে তারা। তাদের লক্ষ্য, শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া।
এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের বেদান্ত গোষ্ঠী ও তাইওয়ানের ফক্সকন যৌথভাবে গুজরাটে সেমিকন্ডাক্টর চিপ ও বৈদ্যুতিন ডিসপ্লে প্যানেলের কারখানা তৈরির লক্ষ্যে চুক্তি করেছে। এতে প্রায় ১ দশমিক ৫৪ লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে ফক্সকন-বেদান্ত।
ফক্সকনের এ সিদ্ধান্ত মোদি সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর মাধ্যমে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত যে দূরত্ব রয়েছে, তা কমার পথ অনেকটাই মসৃণ হবে।
এ ছাড়া ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদির হাত আরও শক্তিশালী হবে—এমনটাও ধারণা করা হচ্ছে।