আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জব্দ হওয়ার পর থেকে জেনেসিস মার্কেটের ওয়েবসাইটে এই ব্যানার দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী অনলাইন প্রতারকদের পাসওয়ার্ড কেনা-বেচার বৃহত্তম অনলাইন প্লাটফর্ম জেনেসিস মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর থেকে শুরু হওয়া ১৭ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সমন্বিত এক অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওয়েবসাইটটি।
জেনেসিস মার্কেট এমন একটি অনলাইন প্লাটফর্ম, যেখানে জড়িত সবাই মূলত অপরাধী। এখানকার বিক্রেতারা সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য চুরি করেন। এরপর সেগুলো বিক্রি করে দেন অনলাইন প্রতারকদের কাছে। পাসওয়ার্ড, লগইন–সংক্রান্ত তথ্য, আইপি অ্যাড্রেসসহ অন্যান্য তথ্য পাওয়া যেত এই ওয়েবসাইটে। এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা ভুক্তভোগী ব্যক্তির নকল 'ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট' তৈরি করতে পারতেন। পরে তা ব্যবহার করা হতো নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে।
জেনেসিস মার্কেটে প্রায়ই ১ ডলারেরও কম মূল্যে এসব ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া যেত। এভাবে তথ্য হাতিয়ে নিয়ে প্রতারকরা সহজেই বিভিন্ন লোকের ব্যাংক এবং শপিং অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পারতেন।
মঙ্গলবার ভোর থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বব্যাপী ১৭টি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওয়েবসাইটটি জব্দ ও এর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের অভিযানে নামে। ধারাবাহিক অভিযানের সময়, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)-এর হাতে গ্রেপ্তার হয় ২৪ জন। তারা সবাই সাইটটির সন্দেহভাজন ব্যবহারকারী বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং ডাচ ন্যাশনাল পুলিশের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে বিশ্বব্যাপী ২০০ অনুসন্ধান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব অভিযানে অংশ নিয়েছে যুক্তরাজ্যের এনসিএ, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
বুধবার (৫ এপ্রিল) জেনেসিসের ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর দেখা যায় সেখানে লেখা- 'অপারেশন কুকি মনস্টার। এই ওয়েবসাইটটি জব্দ করা হয়েছে।'
৮০ মিলিয়ন সেট ক্রেডেনশিয়াল (ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য) এবং ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিক্রির জন্য ওঠানো হয়েছিল জেনেসিস মার্কেটে।
এ বিষয়ে এনসিএ'র ন্যাশনাল ইকোনমিক ক্রাইম সেন্টারের মহাপরিচালক রবার্ট জোন্স বলেন, "অনেকদিন ধরে অপরাধীরা নিরপরাধ মানুষের তথ্য চুরি করে আসছিল। এখন আমরা চাই অপরাধীরা ভয় পাক, কারণ তাদের গোপনীয় তথ্য এখন আমাদের কাছে রয়েছে এবং তাদের ভয় পাওয়া উচিত।"
২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে জেনেসিস মার্কেট ওয়েবসাইট। ইংরেজি ভাষা ও সহজে ব্যবহার করা যায় বলে সুনাম ছিল সাইটটি। অনলাইন প্রতারকদের কাছে এটি লগইন-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ওয়ান-স্টপ শপের মতোই ছিল। পাসওয়ার্ডসহ লগইন-সংক্রান্ত তথ্য, ব্রাউজার হিস্ত্রি, কুকিজ, অটোফিল ফর্ম ডেটা, আইপি এড্রেস এবং লোকেশন সংক্রান্ত তথ্য সবই কেনা যেত এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
এনসিএ'র অনুমান সারাবিশ্বে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ জেনেসিসের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন; তাদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী। এছাড়া, হাজারো অপরাধী জেনেসিস ব্যবহার করছে বলে মনে করা হয়। এরমধ্যে যুক্তরাজ্যে কয়েকশ ব্যবহারকারী রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এরকম সাইবার আক্রমণ এড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উচিত তাদের কম্পিউটার এবং ফোনের অপারেটিং সিস্টেম আপ-টু-ডেট রাখা, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা এবং এর পাশাপাশি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।