কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক হলেন আবদুল হালিম।বরখাস্ত তিন জন হলেন ক্যাশ ইনচার্জ নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার দেলোয়ার হোসেন ও ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান।
এবিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম অর্থসংবাদকে জানান, যারা গ্রাহকের টাকা আত্নসাতের সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত চলছে, তদন্ত করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের গাজীপুর জোনের অঞ্চল প্রধান ও ডিজিএম শামীম আরা সুলতানা গনী অর্থসংবাদকে বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসের ১২ তারিখে এ বিষয়টি আমি জানতে পারি।তারপরই উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্নসাতের তথ্য পাওয়া গেছে।এ ঘটনায় জড়িতরা টাকা ফেরত দিচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাহকের একাউন্টে টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এ ঘটনায় ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স জানতে ব্যাংকে ভিড় করছেন।
অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন অর্থসংবাদকে জানান,প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার মো. দোলোয়ার হোসেনের মধ্যে একজন চেকের দায়িত্বে ছিলেন।বাকি দুই জন ক্যাশে দায়িত্ব পালনের সুবাদে তিন জন মিলে এই কাজটি করেছেন। ফলে সাথে সাথেই বিষয়টি নজরে আসেনি।টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা করা সম্ভব হয়েছে। যার সবই ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি দিয়েছেন। তবে কী পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে তা জানতে ব্যাংকে অডিট চলমান রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার গ্রাহক জুয়েনা বেগম জানান, তার স্বামী ও ছেলে সৌদি আরব চাকরি করেন। সেখান থেকে তার অ্যাকাউন্টে তারা টাকা পাঠান। ১৩ জুলাই তিনি ওই অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে গিয়ে দেখেন সেখানে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা কম। পরে বিষয়টি ম্যানেজারকে অভিযোগ করলে ১৪ জুলাই ৫ লাখ এবং ১৫ জুলাই ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনির বিরুদ্ধে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর দুই ধাপে ওই টাকা তার হিসাবে জমা করা হয়।
আরেক গ্রাহক বদরুন নাহার ২৭ আগস্ট ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে লিখিত এক আবেদনে জানিয়েছেন, বদরুল হাসান সনি প্রতারণা করে তার কাছ থেকে চেক বইয়ের একটি পাতা রেখে দেন। পরবর্তীতে ওই চেকের মাধ্যমে বদরুল হাসান সনি তার হিসাব থেকে এক লাখ টাকা তুলে নেন। বিষয়টি ধরা পড়লে ব্যাংক ম্যানেজারের মাধ্যমে ওই টাকা জমা দেন সনি।
এ ব্যাপারে ওই ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি নিজেই গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল করে চেক বই উত্তোলন করে।পরে চেকে নিজেই গ্রাহকের স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করে। চেকের নম্বর এন্ট্রি না করেই টাকা তুলে নিয়ে যান সনি। এ ঘটনা ধরা পড়ার পর ম্যানেজার তাকে শাসিয়েছেন একবার। অনেক সময় গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে গেলে গ্রাহকের টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা না করেও তা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অর্থাৎ সনি গ্রাহকের টাকা ডেবিট করেও আত্মসাৎ করেছেন, আবার ক্রেডিট করেও আত্মসাৎ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার মো. দোলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত ও শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করে অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।