রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে, রফতানির পরিমাণ বেশি হলেও যেসব পণ্যের মূল্য সংযোজন ৭০ শতাংশের নিচে বা মূল কাঁচামাল দেশীয় উৎস থেকে সংগৃহীত হয় না, সেসব পণ্যকে অপ্রচলিত পণ্য বলা হয়। সংস্থাটি সম্প্রতি এমন ৪৪টি পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় অপ্রচলিত এসব পণ্যের মধ্যে ২১টির রফতানি তলানিতে ঠেকেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পেট্রলিয়াম বিআই পণ্যের রফতানি কমেছে ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্যের ১৯, ফার্মাসিউটিক্যালস ১১ দশমিক ৭০, প্লাস্টিক ওয়েস্ট ২১ দশমিক শূন্য ৭, উল অ্যান্ড উলেন পণ্য ৬২, পাট বহির্ভূত কার্পেট ৩৪ দশমিক ৮২, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য ১৬ দশমিক ৯৯, টেরি টাওয়েল ২৯, হোম টেক্সটাইল ২৯ দশমিক ৩৪, ছাতা ৬৩ দশমিক ৬৪, গ্লাস অ্যান্ড গ্লাস ওয়্যার ৪৫ দশমিক ৪৬, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য ৩৫, আয়রন স্টিল ৫৭, কোপার ওয়্যার ৩১, স্টেইনলেস স্টিল ওয়্যার ৩৪, ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট ৬৩, বাইসাইকেল ১৫, অপটিক্যাল/ফটোগ্রাফিক/মেডিকেল সরঞ্জাম ৬, ফার্নিচার ২০, গলফ শাফট ৭ এবং আকরিক ১৪ শতাংশ।
রফতানিতে ৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছাতায় এ বিষয়ে বাংলাদেশ আমব্রেলা ম্যানুফ্যাকচারার্স মার্চেন্টস অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম হাফিজ আল আসাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে চীন আমাদের চেয়ে অনেক কম দামে আন্তর্জাতিক বাজারে ছাতা বিক্রি করছে। কারণ তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম। অন্যদিকে ছাতার মূল উপকরণ রড, পৃথিবীর মধ্যে আমাদের এখানে রডের দাম সবচেয়ে বেশি। চীনে রডের দাম হিসাব করলে বাংলাদেশী টনপ্রতি ৮০ হাজার টাকা, কিন্তু আমাদের এখানে এক টন রডের দাম প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার টাকা। তাহলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কীভাবে করব? ছাতার আরেকটি কাঁচামাল অ্যালুমোনিয়াম। এটার দামও বাংলাদেশে অনেক বেশি। ছাতার কাপড়টিও আমাদের দেশে তৈরি হয় না, আমদানি করতে হয়।’
কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এলসি এখন পুরোপুরি বন্ধ। কোনো কাঁচামালই আমরা আমদানি করতে পারছি না। অন্যদিকে শ্রমিকরাও এখন কাজ করতে চান না। কারণ আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারি না। অন্যদিকে, চীনে অটোমেটেড মেশিনের সাহায্যে ছাতা তৈরি করা হয়। সেই প্রযুক্তি আমাদের এখানে নেই। আবার যে হারে কর আরোপ করা হয়েছে তাতে আগামীতেও উৎপাদন ও রফতানি সবই কমবে। এরই মধ্যে ছাতার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।’
এদিকে ডলারের সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধের কারণে কমেছে আমদানি এলসি। চলতি বছরের মার্চে আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় আমদানি খরচ কমেছে ৩৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণও কমে এসেছে ৪৫ শতাংশের বেশি। কাঁচামাল আমদানিনির্ভর এসব খাতে আমদানি এলসি খুলতে না পারায় পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ওপর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আমদানি এলসি সেটলমেন্ট ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের মার্চে ৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি সেটলমেন্ট করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে গত মার্চে মাত্র ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি সেটলমেন্ট করা হয়েছে।
অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি কমে যাওয়ার বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে চাহিদা কমেছে। রফতানি কমার এটিই মূল কারণ। কাঁচামাল আমদানি করতে হয় এমন পণ্যগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ফলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের কোনো পদ্ধতি নেই। এখন উৎপাদন খরচ কমানো, নতুন প্রযুক্তি যুক্ত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে আবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করা যাবে।’
আমদানি জটিলতার কারণে প্রভাব পড়েছে এসব খাতের কাঁচামাল আমদানিতেও। অন্যদিকে বাংলাদেশের রফতানি গন্তব্য হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সীমিত আকারে আসছে ক্রয়াদেশ। ফলে ক্রমেই কমছে দেশের অপ্রচলিত এসব পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি।