নিজ দেশে সোনার মজুত ফেরাচ্ছে কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজ দেশে সোনার মজুত ফেরাচ্ছে কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় নড়চড়ে বসছে বিশ্বের আরও অনেক দেশ। কিছু দেশ এখন অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত সোনা নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরিয়ে নিয়ে আসছে।

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সার্বভৌম তহবিল ব্যবস্থাপকদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের আর্থিক খাতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে সার্বভৌম তহবিল ব্যবস্থাপকেরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা এখন মৌলিকভাবে নতুন কৌশল প্রণয়ন করছে। কারণ তাঁরা মনে করছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আরও অনেক দিন থাকবে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ তহবিল ব্যবস্থাপক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তারা মনে করছে, আগামী দশকে মূল্যস্ফীতির হার গত দশকগুলোর চেয়ে বেশি থাকবে। এ কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও চাপের মুখে থাকবে।

বিনিয়োগের অনুকূল দুটি খাত হচ্ছে সোনা ও উদীয়মান বাজারের বন্ড। সোনা সব সময়ই বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে একধরনের রক্ষাকবচ হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। কারণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সোনার দাম বাড়ে। সেই সঙ্গে উদীয়মান বাজারের বন্ডও এ সময় বিনিয়োগের আকর্ষণীয় মাধ্যম। কারণ, এসব বন্ডের সুদহার বেশি উন্নত দেশের তুলনায় বেশি হয়।

কিন্তু গত বছর পশ্চিমা দেশগুলো ৬৪০ বিলিয়ন বা ৬৪ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের রাশিয়ার সোনা ও রিজার্ভ জব্দ করার কারণে বিভিন্ন দেশের মনোভাবে পরিবর্তন আসছে।

জরিপে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সিংহভাগ এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ বলেছে, এতে সোনা আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। আবার তাদের ৬৮ শতাংশ বলেছে, তারা এখন নিজেদের কাছেই সোনা রাখছে, ২০২০ সালে যা ছিল ৫০ শতাংশ।

একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, ‘আমরা লন্ডনে সোনা রেখেছিলাম, কিন্তু এখন নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের ভল্টে রেখেছি।’

জরিপকারী সংস্থা ইনভেসকোর শীর্ষ কর্মকর্তা রড রিংগ্রো রয়টার্সকে বলেছেন, বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন এই ধারণা পোষণ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার সোনা আমার দেশে রাখব—এক বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

বহুমুখীকরণ
ভূরাজনৈতিক কারণসহ উদীয়মান দেশগুলোতে বন্ডের সুদহারের কারণে অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার ব্যতীত অন্যান্য মাধ্যমে রিজার্ভ রাখতে উৎসাহী হচ্ছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণের কারণে ডলারের আকর্ষণ কমছে। যদিও বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের বিকল্প নেই। যারা রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানকে ডলারের বিকল্প হিসেবে মনে করত, তাদের হার ২০২১ সালে ২৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, ইউয়ানের ব্যাপারে আস্থা কমেছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করছে, আগামী দশকের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। ৮৩ শতাংশ মনে করছে, আগামী এক বছরে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি।

এ ছাড়া বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে অবকাঠামো; বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন।

চীন নিয়ে উদ্বেগ ও ভূরাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভারত। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো এখন বাজারের আশপাশে উৎপাদনের যে নীতিতে যাচ্ছে, তাতে মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলের মতো দেশও বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে।

সেই সঙ্গে অনলাইন শপিং ও বাড়িতে বসে কাজের রীতির কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সম্পদ আকর্ষণ হারিয়েছে। এই বাস্তবতায় রিংগ্রো বলেন, গত বছর যেসব সম্পদ তহবিল সম্পদের অতি মূল্যজনিত ঝুঁকি চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং বিনিয়োগের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পেরেছে, তারাই সবচেয়ে ভালো করেছে।

রিংগ্রো আরও বলেন, তহবিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন মূল্যস্ফীতিতে লাগাম পরানোর চেষ্টা করছে। এটা বড় ধরনের পরিবর্তন।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি