সূত্র জানায়, সার আমদানি করতে সরকার আগেই এলসি (ঋণপত্র) খোলে। তবে বন্দরে সার পৌঁছানোর পর সারের বিল পরিশোধ করতে বিলম্ব করা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে। চট্টগ্রামের বর্হিনোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে সারসহ অন্যান্য আমদানি পণ্য খালাস করতে ব্যবহৃত হচ্ছে লাইটার জাহাজ। এসব জাহাজগুলোতে পণ্য বোঝায় করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকে সিরিয়াল নিতে হয়। সিরিয়াল পেলে পণ্য খালাসের অনুমতি পায় জাহাজগুলো। আর অনুমতি না পেলে মাসের পর মাস জাহাজগুলোকে বন্দরে অপেক্ষা করতে হয়। আর পণ্য খালাসে বিলম্ব হওয়ায় প্রতিদিন একটি জাহাজকে প্রায় ১২ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়।
জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর সারের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন। এর বড় অংশই আমদানি হয়, বাকিটা দেশের কারখানায় উৎপাদিত হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সার বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ টন। এর ৮৮ শতাংশ বা ৫২ লাখ টন সার আমদানি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারের চাহিদা ধরা হয়েছে ৬৮ লাখ টনের কিছু বেশি। এর প্রায় ৪০ লাখ টন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সূত্র মতে, সরকারি দরপত্রে অংশ নিয়ে আমদানিকারকেরা বিশ্ববাজার থেকে সার আমদানি করেন। তবে বিক্রি করতে হয় সরকার নির্ধারিত দামে। বাড়তি খরচ ভর্তুকি হিসাবে দেয় সরকার। এ বাড়তি খরচের মধ্যে দেরিতে পণ্য খালাসের বিষয়টিও রয়েছে। অর্থাৎ জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে বিলম্বের কারণে যে জরিমানা দিতে হয় সেটিও আমদানিকারককে ভর্তুকি হিসেবে দিতে হয় সরকারকে।
জানা গেছে, লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের আওতায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জাহাজ রয়েছে। সংগঠনটির কনভেনার নুরুল হক হলেও আমদানিকারক ও জাহাজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেটটির মূল ভূমিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের (বিসিভিওএ) নির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা। তাঁর ইশারায় ডব্লিউটিসি থেকে পণ্য খালাসের সিরিয়াল বা ভাড়ার অনুমতি মিলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, কোনো জাহাজ মালিক ডব্লিউটিসির অনুমতি ছাড়া সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে পণ্য খালাসের চুক্তিবদ্ধ হলে সেখানে বাধাগ্রস্ত করে এ সিন্ডিকেট। আমাদানিপণ্য খালাস কার্যক্রম একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় আছে ওই সিন্ডিকেট। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বেশিরভাগ লাইটার জাহাজ মালিকরা। এছাড়াও ডব্লিউটিসির কোনো নেতা বা জাহাজ মালিক সিন্ডিকেটের কথায় দ্বিমত পোষণ করলে তাদেরকে নানা রকম হয়রানি করাসহ বন্ধ করে দিচ্ছে পণ্য খালাসের কার্যক্রম। অনেকেই ওই সংগঠনের সদস্যভুক্ত না হলেও নেতাদের ম্যানেজ করে নিয়মিত সিরিয়াল দিচ্ছে ওই সিন্ডিকেট।
বিদেশ থেকে সার আমদানির পর জাহাজগুলোকে পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বিলম্ব করে ডব্লিওটিসির সিন্ডিকেটটি। এর ফলে প্রতিদিন অন্তত ১২ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। আর অতিরিক্ত খরচ হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে এ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে আদায় করে।
সূত্র জানায়, গত ১৫ জুন এমভি ক্লিপার কেট নামের একটি জাহাজ সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। তবে জাহাজটি পণ্য খালাসের অনুমতি পায় ১৪ জুলাই। পণ্য খালাসে এক মাস বিলম্বের জন্য জাহাজটিকে জরিমানা দিতে হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ সার আমদানিতে সরকারকে এ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সার বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ওবায়দুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু শুনিনি, আমার জানা নেই। আমাদের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জেনে নিতে পারেন বলে ফোন রেখে দেন।
কানাডিয়ান জাহাজ মালিকের প্রতিনিধি ও ড্রাগন ফার্টিলাইজারের কর্মকর্তা মো. মাসুদ অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে বন্দরে পণ্য পৌঁছে দেওয়া। বাকি কাজ হচ্ছে বিএডিসির। বিএডিসি থেকে আবার পণ্য পরিবহনের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। জাহাজ বন্দরে আসার পর প্রতিদিন ৩ হাজার টন করে পণ্য খালাস করতে পারে। তবে লাইটার জাহাজ সংকট বা ঝড়-তুফানের কারণে অনেক সময় পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পণ্য বন্দরে আসার পর ব্যাংকগুলো ডলার দিতে পারছে না, পণ্যের দাম বা ইনভয়েস ভ্যালু দিতে পারছে না। এমনও আছে এক মাস পার হলেও ডলার দিতে পারে না। যারা পরিবহণ করে তাদের নিজস্ব লাইটার থাকে অথবা তারা লাইটার ভাড়া নেয়। তবে লাইটারের বিষয়টি আমরা দেখতে পারি না।