স্ক্র্যাপ, প্লেট ও বিলেট জাতীয় কাঁচামালের দাম গত তিন মাসে টনে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা কমেছে। তবে গত পাঁচ মাস ধরে উচ্চ গ্রেডের এমএস রড প্রতি টন ৯৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিপব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা।
দেশের শীর্ষ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম কিছুটা কমলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব খুব কমই পড়ছে। এর কারণ ডলারের উচ্চ বিনিময় হার। তাছাড়া, ডলার-সংকটের কারণে এলসি খোলার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে ইস্পাত পণ্য এমএস রডের চাহিদা ও উৎপাদন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রডের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারের অনেক প্রকল্পের নির্মাণকাজ এখন স্থবির। যেই কারণে রডের বেচাকেনা একদম কমে গেছে। জুন মাস থেকে কমতে শুরু করে স্ক্র্যাপের দাম কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইয়ার্ডে প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ হাজার টাকায়। মে মাসের শেষ দিকে এই স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৭০-৭১ হাজার টাকা। সে হিসেবে, গেল দুই মাসে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম কমেছে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। স্ক্র্যাপের পাশাপাশি কমে এসেছে ইস্পাতের কাঁচামাল প্লেট ও বিলেটের দামও। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন প্লেট ৭৫ হাজার টাকা ও বিলেট ৭৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই মাস আগেও বাজারে প্রতি টন প্লেট ৮২ হাজার টাকা ও বিলেট ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সে হিসেবে, দুই মাসের ব্যবধানে বাজারে প্রতি টন প্লেটে ৭ হাজার টাকা ও বিলেটে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমে গেছে। এদিকে গত তিন-চার মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম টনে ৮০ ডলারের বেশি কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ ডলারে। গেল মার্চ-মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৬২০ ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত তিন-চার মাস ধরে স্ক্র্যাপ ও পুরোনো জাহাজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে দিনদিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকৃত জাহাজের বিপরীতে বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইস্পাতের কারখানাগুলোতে কাঁচামালের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্ক্র্যাপ, প্লেট ও বিলেটের দাম কমে গেছে। এতে লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছেন জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক সময়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে ১৫-১৬ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ মজুত থাকে। কিন্তু বর্তমানে স্ক্র্যাপের মজুত ২-৩ লাখ টনের নিচে চলে এসেছে। স্ক্র্যাপসহ সব কাঁচামালের দাম কমলেও এখনো আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ইস্পাত খাতের প্রধান পণ্য এমএস রড। ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে রডের বাজার। ২০২০ সালের অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া পণ্যটি আড়াই বছরে দফায় দফায় বেড়ে চলতি বছরের মার্চে লাখ টাকায় পৌঁছে। রড প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের দাম বেশি থাকায় এবং বাজারে পণ্যটির চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তাই পণ্যটির দাম এখনো বেশি।
এমএস রড ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ টিএমটি) এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৯৬ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০০ টাকায়।