দেশে খেলাপির চেয়েও বেশি পুনঃ তফসিল ঋণ

দেশে খেলাপির চেয়েও বেশি পুনঃ তফসিল ঋণ
দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের চেয়ে পুনঃ তফসিল ঋণের পরিমাণ কয়েক শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে তফসিলি ব্যাংকের করা ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করার আবেদনে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে গত বছরের শেষে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। যেখানে একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপির তুলনায় পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ ৯২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য মতে, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। তাতে গত বছর ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ৫ হাজার ২২ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি কমে ৮ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় নামে, যা ২০২১ সালে ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।

ব্যাংকের মুনাফা বেশি হলে মালিক ও শেয়ারধারীরা যেমন বেশি মুনাফা পান, তেমনি সরকারও বেশি কর পায়। ফলে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে নিয়মিত আগ্রহ দেখায় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক। গত বছরের শেষে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। আবার পুনঃ তফসিল করায় এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। তবে এসব ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ শতাংশে অবস্থান করতো।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়ে রেখেছে। আইএমএফ পুনঃ তফসিল করা ঋণ ও আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণকে খেলাপি হিসেবে দেখানোর পক্ষে।

পুনঃ তফসিল করা ঋণও খেলাপি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ কথাই বলে। পুনঃ তফসিল করা ঋণ, আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণকে হিসাবে ধরলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করে আর্থিক প্রতিবেদন থেকে মুছে ফলা হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত যা ছিল ৬০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে ২০২২ সালে। এই বছরে পুনঃ তফসিল করা হয় ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ছিল ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে পুনঃ তফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পুনঃ তফসিল করা ঋণের ৭১ শতাংশ বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর, ২৪ শতাংশ সরকারি ব্যাংকগুলোয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ শতাংশ আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে। ৮০ শতাংশ ঋণ নিয়মিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে শিল্প খাতে। পুনঃ তফসিল করা ঋণের প্রায় ৩১ শতাংশ শিল্প খাতের। এরপরই রয়েছে পোশাক ও টেক্সটাইল খাত। পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে রয়েছে পুনঃ তফসিল করা ঋণের ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাণিজ্যিক ঋণ ও চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ৯ শতাংশ। তবে এখন সবচেয়ে বেশি পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দেখা যায় জাহাজভাঙা ও নির্মাণ খাতে, যা প্রায় ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের শেষে ব্যাংক খাতের আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের ওপর চাপ ছিল। এ জন্য গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ৯ লাখ ১০ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ধার দেয়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ৮ লাখ ৬০ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ধার দেওয়া-নেওয়া করে। ২০২১ সালে এই পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

বিদেশি ডেবিট কার্ডে অর্থ তোলা বন্ধ করল ইবিএল
এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি নূরুল আজীম
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
বিকাশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহফুজ মারা গেছেন
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদের ৩ কমিটি গঠন
ব্যাংকে চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শিথিল
মাসিক সঞ্চয় হিসাব খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
ফের এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন
অফিসার পদে ৭৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে সরকারি ৫ ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালক হলেন যারা