পোশাক খাতে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কার্যকর করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কারখানা মালিকেরা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে এই প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। বিবৃতিতে তিনি মজুরি বোর্ডের স্বাধীন কার্যক্রম ও গ্রেডভিত্তিক মজুরির ঘোষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন। মজুরি নির্ধারণে মালিক পক্ষের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না থাকার কথা জানান তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, শ্রম আইনে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও বাস্তবে কারখানাগুলো যোগ্য শ্রমিকদের পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে নূন্যতম পরিমাণের চেয়েও বেশি, উচ্চতর ইনক্রিমেন্ট দিয়ে থাকে। এর বাইরেও মোট মজুরি কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন ভাতা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে হাজিরা ভাতা, উৎপাদন ভাতা, বিনামূল্যে কিংবা ভর্তুকিযুক্ত দুপুরের খাবার, বিনা মূল্যের নাশতা। অনেক কারখানা বিনা মূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে মহিলা শ্রমিকদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে। কিছু কারখানা আবার অন্তঃসত্ত্বা নারী শ্রমিকদের দুধ এবং ডিমসহ অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করে, ফলিক অ্যাসিডের পরিপূরক বিতরণ করে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা করে। কিছু কারখানা শ্রমিকদের শিশুদের জন্য বিনা মূল্যে স্কুল, ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করে। চিকিৎসা, বিবাহ ইত্যাদির জন্য বিশেষ সহায়তাসহ আরও শিল্পে অসংখ্য সেরা অনুশীলনের দৃষ্টান্ত রয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্পখাত হলো ৪০ লাখ শ্রমিকের একটি শিল্প, যার ওপর সরাসরিভাবে ২ কোটি মানুষের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতি এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। শিল্পের প্রবৃদ্ধি, অর্থনীতি ও দেশের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধির পরিপূরক। তাই এই শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা শ্রমিকদের, তাদের পরিবার এবং বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফারুক হাসান বলেন, যদিও পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি বৃহত্তর ভূমিকা পালন করছে, তারপরও আমরা প্রায়শই শিল্পবিরোধী পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন ও বিভ্রান্তিপূর্ণ উপস্থাপন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এমনকি বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতিগুলো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে, এগুলোর প্রভাব সব সময় শ্রমিকদের পক্ষে না-ও যেতে পারে, তবে আমরা একসঙ্গে যাত্রার পথ প্রশস্ত করে চলতে চাই। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর উচিত হবে শিল্পের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, শিল্পের উৎপাদন ব্যয় এবং মূল্যের গতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাক উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশে তুলনামূলক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়গুলো আমলে নেওয়া। এর বিপরীতে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি পণ্যের দাম কমে আসার তথ্য তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে।