জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির যে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা থেকে এই চিত্র পাওয়া যায়।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বিশ্ব বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে, তা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের কোনো অঞ্চলই রপ্তানির পতন এড়াতে পারেনি। বিগত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্ব বাণিজ্য কমে গেছে ১৯ শতাংশ।
তবে তৃতীয় প্রান্তিকের প্রাথমিক উপাত্ত এটি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেয়। তারপরও এই সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে সাড়ে চার শতাংশ।
আঙ্কটাড মনে করছে, শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে বিশ্ব বাণিজ্যে আগের বছরের তুলনায় অন্তত ৭ শতাংশ কমে যাবে, এমনকি তা ৯ শতাংশও কমতে পারে।
আঙ্কটাড বলছে, আঞ্চলিক হিসাবে সবাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পতন দেখেছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুলনামূলকভাবে উন্নত দেশগুলোর পতনের হার বেশি। সে তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো কিছুটা ভালো করেছে। আর এলাকা হিসেবে ভালো অবস্থানে ছিল পূর্ব এশিয়া। পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ার পতন ছিল বেশি জোরালো। এই অঞ্চলে আমদানি কমেছে ৩৫ শতাংশ এবং রপ্তানি কমেছে ৪১ শতাংশ।
এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পরিস্থিতির অবস্থা বা কর্মক্ষমতা (পারফরম্যান্স) ও অস্থিরতার (ভোলাটালিটি) মান (স্কোর) নির্ণয় করেছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানির কর্মক্ষমতায় যার মান বা নম্বর যত বেশি, সে দেশের রপ্তানির অবস্থা তত ভালো বলে বিবেচিত হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও দেখাচ্ছে যে একমাত্র পূর্ব এশিয়া অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় ভালো করেছে বা তাদের বাণিজ্য পতনের হার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। পণ্য রপ্তানিকে বাণিজ্য পরিস্থিতির নির্দেশক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আঙ্কটাড বলছে যে তৃতীয় প্রান্তিকে চীন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ানসহ গুটিকয়েক দেশ বিগত বছরের একই সময়ে তুলনায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পরিস্থিতির অবস্থা বা কর্মক্ষমতা (পারফরম্যান্স) ও অস্থিরতার (ভোলাটালিটি) মান (স্কোর) নির্ণয় করেছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানির কর্মক্ষমতায় যার মান বা নম্বর যত বেশি, সে দেশের রপ্তানির অবস্থা তত ভালো বলে বিবেচিত হয়েছে। বিপরীতে রপ্তানি অস্থিরতায় যার মান যত বেশি, তার রপ্তানি বাণিজ্য তত বেশি নাজুক বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সূচক দুটো পরস্পরের সঙ্গে নেতিবাচকভাবে সম্পৃক্ত—প্রথমটি কমলে, দ্বিতীয়টি বাড়ে।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৯৬৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে নেমে আসে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলারে। অবশ্য বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০৩ কোটি ডলার।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের রপ্তানি অস্থিরতার মান বা সূচক হলো দশমিক ৯২, যা নির্ধারিত হয়েছে বিগত চার প্রান্তিকের বা এক বছরের রপ্তানির কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে।
দেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সময়কালে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আগের প্রান্তিকের তুলনায় (জানুয়ারি-মার্চ) ৫১ শতাংশ কমে গেছে।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৯৬৭ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে নেমে আসে প্রায় ৪৭০ কোটি ডলারে।
অবশ্য বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০৩ কোটি ডলার।
দক্ষিণ এশিয়ায় রপ্তানি অস্থিরতার সূচকে ভারত (দশমিক ৭৯) ও পাকিস্তান (দশমিক ৬৬) বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আর বাংলাদেশের চেয়েও বেশি নাজুক হলো নেপালের রপ্তানি পরিস্থিতি, যার অস্থিরতার মান ১ দশমিক ০৬।
আঙ্কটাড রপ্তানির কার্যক্ষমতা বা পরিস্থিতির মান বা সূচক নির্ণয় করেছে প্রবৃদ্ধির হার, কাছাকাছি অর্থনীতির দেশগুলোর রপ্তানি পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা এবং প্রধান ও উদীয়মান বাজারগুলোয় রপ্তানির অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মান হয়েছে মাত্র দশমিক ১২, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মান যথাক্রমে দশমিক ২৪ ও দশমিক ২৭। তবে নেপালের মান দশমিক শূন্য ৯, যা বাংলাদেশের চেয়েও কম। এই মান যার যত কম, তার রপ্তানির অস্থিরতার মাত্রা তত বেশি, যা আবার প্রতিফলিত হয় ভোলাটালিটি বা অস্থিরতার সূচকে।