করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালেই দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। অনেক হাসপাতাল তাই রোগী ভর্তি নিচ্ছে না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রোববার অক্সিজেন চেয়ে আকুতি জানিয়েছেন।
রোববার অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩ লাখ ৪৯ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে দৈনিক আক্রান্ত তিন লাখ ছাড়ায় ভারতে। এরপর থেকে টানা চার দিন ধরে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ ছিল তিন লাখের বেশি।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে রেকর্ড ২ হাজার ৭৬৭ জন মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যাটা ছিল ২ হাজার ৬২৪ জন। অর্থাৎ ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে প্রতি মিনিটে ২৪৩ জন আক্রান্ত এবং দুই জন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
শুধু গত তিন দিনে ভারতে দশ লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কয়েক মাস আগের চেয়ে বর্তমানের এ চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। ওই সময় ভারতের আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে দশ লাখ রোগী যুক্ত হতে সময় লেগেছিল ৬৫ দিন।
এমনকি গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতে যখন প্রথম দফায় করোনা সংক্রমণের চূড়া চলছিল তখনও নতুন করে দশ লাখ রোগী আক্রান্ত হতে সময় লেগেছিল অন্তত ১১ দিন। সবচেয়ে বড় কথা ভারতে টানা ১৯ দিন ধরে ছয় সংখ্যার বেশি মানুষ দৈনিক আক্রান্ত হয়েছেন।
ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার রোববারের প্রতিবেদনে এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানানো হয়েছে, ভারতে দ্বিতীয় দফায় যে দিন থেকে দৈনিক আক্রান্ত লাখ ছাড়িয়েছে, তারপর বাকি দিনগুলোতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪২ লাখের বেশি মানুষ।
প্রথম দফার সংক্রমণের চূড়া দেখার পর ভারতে দৈনিক সংক্রমণ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ভারতে সক্রিয় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার। ওই সময় সুস্থতার হারও ছিল সর্বোচ্চ।
তবে দ্বিতীয় দফা প্রকোপ শুরুর পর সেই সংখ্যাটা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মাত্র দুই মাসের মাথায় ভারতের সক্রিয় করোনা রোগী এখন ২৬ লাখের বেশি। এই সময়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৩ গুণ বেড়েছে।
সক্রিয় রোগীর সংখ্যা যত বেড়েছে তত হাসপাতালে আইসিউ বেড আর অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কারণ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়লে অনেকেরই মেডিকেল অক্সিজেন এবং আইসিউতে রাখার প্রয়োজন পড়ে।
ভারতে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র প্রদেশ। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় করোনা রোগীর ২৬ শতাংশই ওই রাজ্যের। এরপর ভারতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রোগীর তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক এবং কেরালা।