রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর প্রথম ঘণ্টাতেই হোঁচট খায় এ উদ্যোগ। প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে জানান, লেনদেনের জন্য ব্যবহূত ডিজিটাল ওয়ালেট কাজ করছে না। এছাড়া বিটকয়েন অ্যাপটি অ্যাপল ও হুয়াওয়েসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট প্লাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে চিভো নামের ডিজিটাল ওয়ালেটটি হুয়াওয়ে প্লাটফর্মে পাওয়া যেতে শুরু করে। এরপর গ্রাহকরা রেজিস্ট্রেশন করতে সমস্যার কথা জানালে সরকার আরো সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এরপর অ্যাপটি আরো প্লাটফর্মে সহজলভ্য হতে শুরু করে।
এদিন বিকালে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বুকেলের ভিডিওগুলোতে ম্যাকডোনাল্ড’স ও স্টারবাকসসহ এল সালভাদরের খুচরা বিক্রেতাদের বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে দেখা যায়।
এর আগে বিটকয়েনে লেনদেন উদ্বুদ্ধ করতে প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে ৩০ ডলারের বিটকয়েন দেয়া হয়। বুকেলে দাবি করেছেন, বিটকয়েনে লেনদেনের মাধ্যমে সালভাদরবাসীরা প্রতি বছর প্রবাসী আয়ের জন্য কমিশন বাবদ ব্যয় হওয়া ৪০ কোটি ডলার সাশ্রয় করতে পারবেন। ব্যাংক হিসাব না থাকলেও তারা এ আর্থিক পরিষেবা নিতে পারবেন।
বুকেলে টুইট করেন, ‘আমাদের অতীতের দৃষ্টান্তগুলো ভাঙতে হবে। এল সালভাদরের প্রথম বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার আছে।’ ৪০ বছর বয়সী বুকেলে আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। তবে তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মতামত জরিপে দেখা গেছে, সালভাদররা বিটকয়েনের ব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত এবং এটির দামে অস্থিরতা ও কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা।
এদিন বিটকয়েন লেনদেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার হাজারেরও বেশি মানুষ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সামনে টায়ার ও আতশবাজি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এসব কারণে বিটকয়েনের দামেও পতন ঘটেছে। এদিন ভার্চুয়াল এ মুদ্রার দাম ৫২ হাজার ডলার থেকে কমে ৪৩ হাজার ডলারেরও নিচে নেমে যায়। গত এক মাসের মধ্যে এটিই মুদ্রাটির সর্বনিম্ন দাম। বিটকয়েনের দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে সরকার আরো ১৫০ বিটকয়েন কিনেছে, যার মূল্য প্রায় ৭০ লাখ ডলার। লেনদেন শুরুর আগে দেশটি প্রায় ২ কোটি ডলারের ৪০০ বিটকয়েন কিনেছিল।
এদিকে এল সালভাদরের দরিদ্ররা নিশ্চিতভাবেই বিটকয়েনের লেনদেনের বাইরে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখনো ইন্টারনেটের বাইরে থেকে গেছেন। মোবাইল ফোনে বিটকয়েন লেনদেনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানান মিষ্টি বিক্রেতা জোস হেরেরা। তিনি বলেন, আগামীতে বিটকয়েন লেনদেন নিয়ে আমাকে অনেক ভুগতে হবে বলেই মনে হচ্ছে।
এসব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বুকেলে বলেন, সব নতুন কিছুর মতো বিটকয়েন নিয়ে এল সালভাদরেরও অনেক কিছু শেখার আছে। সবকিছু একদিনে বা এক মাসে অর্জিত হবে না।
বিশ্লেষকরা বলেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেনে বড় ঝুঁকি রয়েছে। এটি অর্থ পাচার ও অপরাধমূলক কাজে অর্থায়নের বিষয়টি উৎসাহিত করতে পারে।
বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ জনি রাইট সোল বিবিসিকে বলেন, এটি প্রেসিডেন্ট বুকেলে, তার সরকার ও বিটকয়েন লেনদেন পরীক্ষার জন্য খুব খারাপ দিন ছিল। বেশির ভাগ মানুষই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বেশি কিছু জানেন না। আমরা যা জানি তা হলো, এটি খুব অস্থিতিশীল একটি বাজার। এবং প্রথম দিন তার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিটকয়েন লেনদেনের বিরোধী নই। আমরা বিশ্বাস করি, এটি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়। আর ঝুঁকি সত্ত্বেও রাষ্ট্র এ লেনদেনকে সমর্থন করছে। তবে দিন শেষে আমরা করদাতারাই ভুক্তভোগী হব।