শনিবার (১৬ এপ্রিল) এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘এক্সপোর্ট চ্যালেঞ্জেস অব বাংলাদেশ আফটার গ্রাজুয়েশন ফ্রম এলডিসি স্ট্যাটাস: অপশনস ফর দি প্রাইভেট সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানান সভাপতি।
এ সময় তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পরবে রফতানি খাত। তাই রফতানিকে সমৃদ্ধ করতে সব খাতকে সমান সুবিধা দেওয়া দরকার। এ ছাড়াও নবায়নের প্রয়োজনীয়তা ছাড়া স্থায়ী নিবন্ধন এবং শুধু জমি,পরিবেশ, ইমারত, আগুন ও কর সনদের মাধ্যমে শিল্প স্থাপনের সুযোগ, ওয়ানস্টপ সেবা চালুর আহ্বান জানান মো. জসিম উদ্দিন। রফতানি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইপিবি, এনবিআর, ও অন্যান্য প্রশাসনিক সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা কার্যকর করার দাবিও জানান তিনি।
এফবিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যকে ব্র্যান্ডিং করেন। প্রত্যেক বিদেশ সফরে তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে যান।
এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগের চার বছর মোটেও কম সময় নয় উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার করা হিসাব পরিবর্তন করে দেবে। এ সময় তিনি ভ্যাকসিন ক্রয় ও মেগা প্রকল্পগুলোতে কোন দুর্নীতি হয়নি বলেও জানান।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ব্যাংক ব্যবসা সহজীকরণ সূচক প্রকাশ বন্ধ করলেও, দেশে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে চালুর পর থেকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস থেকে বিডা সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজারের বেশি সেবা দেয়া হয়েছে। দৈনিক গড়ে বিডার ১০০টি সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে বিডার বাইরে থাকা ১৮টি সংস্থার মাত্র ৫৮টি সেবা যুক্ত হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের এসব সেবা বিডার ওএসএস প্ল্যাটফর্ম থেকে এসব সেবা গ্রহণ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এলডিসি উত্তরণের পরেও যেন অন্তত ৬ বছর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অব্যহত থাকে সে ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে দর কষাকষি চলছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে রফতানি ও বাণিজ্য সক্ষমতা ধরে রাখতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি চলছে।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, এলডিসি উত্তরণ চ্যালেঞ্জে সরকার শিল্পখাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরি, আমদানি পণ্যের বিকল্প উৎপাদন সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান বলেন, বাংলাদেশের শিল্পখাত যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ। দেশে প্রায় সব ধরনের পণ্যই উৎপাদিত হয়। কিন্তু এসব পণ্যকে রফতানি বাজারের জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে।
সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির, এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মামুন রশীদ, এফবিসিসিআই’র উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান।
দক্ষ জনশক্তি তৈরি, সরবরাহ শৃঙ্খলা অব্যহত রাখা, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ফাইভ-জি, ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়া, শিল্পের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ, প্রযুক্তি অভিযোজন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এর আগে, সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান। তিনি জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর, বাংলাদেশ তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জর মধ্যে পড়বে। যেগুলো হলো শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার হারানো, রফতানিতে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া ও ট্রিপসের আওতায় সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে, কানাডায় পোশাক রফতানিতে ১৬.৫%, ইইউতে ১১.৫%, জাপানে ৯%, কোরিয়ায় ১২.৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।
বাড়তি শুল্কের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, রফতানি কমতে পারে ২৬.৬ শতাংশ যার আর্থিক মূল্য ৬,৩৮০,৩০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মূল প্রবন্ধে এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসার খরচ হ্রাস, কাস্টমসের সক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।