বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের ২৯ দিনে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। মার্চ থেকে মে তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৪৮ কোটি ডলারের রফতানি কম হয়েছে।
আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে বাংলাদেশের বৃহৎ রফতানি গন্তব্য প্রায় প্রতিটি দেশেই এখন কভিড-১৯-এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও অঘোষিত লকডাউন গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়ে গতকাল থেকে তা তুলে নেয়া হয়েছে। একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার কারণে দেশের রফতানি কার্যক্রম বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে। গত মার্চে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এপ্রিলে কমে প্রায় ৮৫ শতাংশ। মে মাসেও একই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, মে মাসের প্রথম ২৯ দিনে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১০৬ কোটি ৮২ ডলারের। অন্যদিকে গত বছরের ১-২৯ মের মধ্যে পণ্যটি রফতানি হয়েছিল ২৮১ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের।
অর্থাৎ পণ্যটির রফতানি কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭৪ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার মূল্যের। সে হিসাবে পণ্যটির রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৬২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পোশাক রফতানি ৫০০ কোটি ডলার হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ। সেই আশঙ্কা প্রায় পুরোটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিন মাসের হিসাবে দেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি কমেছে ৪৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ডলারের বা ৫৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
চলতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৬৯ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার ডলারের। ২০১৯ সালের একই সময়ে রফতানি হয় ৮১৮ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার ডলারের।
চীনের উহানে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় গত ডিসেম্বরের শেষে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে জানুয়ারি থেকেই দেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে নিম্নমুখিতা বজায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাত প্রথমে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটে পড়ে। চীনে নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে দেশটি থেকে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হয়। দেশে তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্যের আনুমানিক ৬০ শতাংশ কাপড় আমদানি হয় চীন থেকে। আর নিট পণ্যের কাঁচামাল আমদানি হয় ১৫-২০ শতাংশ।
পরবর্তী সময়ে ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু পরে রফতানি গন্তব্যগুলোয় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় চাহিদার সংকট তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করতে থাকে একের পর এক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান।