সেহরির জন্য যেসব খাবার স্বাস্থ্যকর

সেহরির জন্য যেসব খাবার স্বাস্থ্যকর
রোজা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আর সেই ইবাদত যথাযথভাবে পালন করতে সেহরিতে প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। সারাদিন রোজা রাখার শক্তি পাওয়ার জন্য সেহরি হতে হবে পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যকর।

সেহরি আপনার সারাদিনের কাজ করার শক্তি যোগায়। দেখা যায় অনেকেই সেহরিতে বেশি খেয়ে থাকেন। আবার অনেকে সেহরির সময়ের অনেক আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে যান। কোনোটিই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সেহরিতে একটু সময় নিয়ে পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

বিশেষ করে এবারের তীব্র গরমে সেহরির খাবার তালিকায় আলাদাভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, নইলে অসুস্থতাসহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেহরির খাবার এমন হওয়া উচিত, যেন তা সারাদিনের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে।

ভাতের সঙ্গে সবজি, মাছ অথবা মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া দুধ-কলা-ভাত অথবা আম-দুধ-ভাত খাওয়া যায়। ভাত, সবজি ও মাছ খাওয়ার পর এক কাপ দুধ ও খেজুর খেলে সারা দিন সুন্দরভাবে রোজা রাখা যায়। অনেকেরই চা-কফি পান করার অভ্যাস থাকে। তাই অনেকেই সেহ্‌রি খাওয়ার পর চা অথবা কফি পান করে থাকেন, এটা মোটেও উচিত নয়।

সেহরি খাওয়ার পর একটি বা দুটি খেজুর খেলে সারাদিন পানিশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করবে।

সেহরিতে যেসব খাবার খাওয়া যেতে পারে

ভাত–রুটি
সেহরি হচ্ছে রমজানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার। সেহরির খাদ্য তালিকায় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন খাবার রাখা উচিৎ, যা হজম হতে সময় লাগে এবং দীর্ঘক্ষণ কর্মশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ দেয় এবং খাদ্যে আঁশের চাহিদা জোগায়। ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, লাল আটার রুটি, আলু, চিড়া, ওটস এই খাবারগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এসব খাবার খেলে দিনের বেলায় কম ক্ষুধা লাগে। তাই সেহরির খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখলে তা আপনাকে রোজার সময়ও সারাদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখবে।

প্রোটিন জাতীয় খাবার
সেহরিতে আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকলে তা আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারাদিন আপনাকে শক্তি যোগাবে। মাছ, মাংস, তরল দুধ, গুঁড়া দুধ, দুধজাত খাবার, ডিম, ডাল প্রভৃতি খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়া এসব খাবারে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, আয়রন প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানও প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা আপনার হাড়ের সুস্থতার জন্য জরুরি। বিশেষভাবে সেহরিতে দুধ আপনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার হতে পারে।

তাজা সবজি
ভিটামিন শরীরের জন্য খুবই জরুরি একটি পুষ্টি উপাদান। তাজা শাকসবজি দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। তাই সেহরিতে প্রতিদিন সবজি খাওয়া উচিৎ। তবে রাতের খাবারে অতিরিক্ত আঁশযুক্ত সবজি খাওয়া ঠিক না। কারণ অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি হজমের ঝামেলা করতে পারে। তার বদলে সেহরিতে মাঝারি আঁশের সবজি যেমন- ঝিঙে, চিচিংগা, লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, গাজর প্রভৃতি খাওয়াটা বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।

ফলমূল
সেহরিতে খাবারের পর ফল আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে। তাই সেহরিতে খাবারের পর ফল খাবেন। মাঝারি আঁশযুক্ত ও নরম পাকা ফল এক্ষেত্রে বেশি উপকারী। পেঁপে, কলা, আম ইত্যাদি অথবা বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ও দুধের তৈরি কাস্টার্ড খাওয়া যেতে পারে। এইসব সুস্বাদু ফল ও ফলজাত খাবার দেহের পুষ্টি উপাদান ও পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দীর্ঘসময় শরীরের শক্তি যোগায়।

তরল জাতীয় খাবার
রোজা রাখার অন্যতম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হচ্ছে শরীরের পানি ঘাটতি। তাই যেসব খাবার পানিশূণ্যতা দূর করে, সেহরির খাদ্য তালিকায় সেসব খাবার যোগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডাবের পানি, শসা, আনারস, টমেটো, কমলা ও তরমুজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হতে পারে। এছাড়া সেহরিতে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা উচিৎ যেন সারাদিনের পানির ঘাটতি পূরণ হয়।

সেহরিতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা ভালো
সেহরির সময় বেশি তৈলাক্ত, মসলাদার এবং ঝাল খাবার খাওয়া উচিৎ না। সেক্ষেত্রে সেহরির খাদ্য তালিকা থেকে বিরিয়ানী, পোলাও, তেহরি প্রভৃতি ভারি ধরনের খাবার বাদ দিতে পারেন। কারণ সেহরিতে এসব খাবার খেলে বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। অনেকেই সেহরিতে চা অথবা কফি খেতে পছন্দ করেন। অনেকে আবার কোকের মত কোল্ড ড্রিঙ্কস বা বেভারেজ পানীয় খেতে তৃপ্তি পান। কিন্তু এসব পানীয়তে ক্যাফেইন থাকে, যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে শরীরের পানির পরিমাণ কমে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি তৃষ্ণা পায়। তাই সেহেরিতে এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।

প্রচণ্ড গরমে রোজা রেখে সুস্থ থাকতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সেহরির খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সঠিক খাদ্যাভাস না মেনে রোজা রাখলে খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে দেহে পানিশূন্যতা যাতে না হয়, সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। আর অবশ্যই সেহরি খাওয়ার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। তাহলে আশা করি এই গরমেও রোজা রাখতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।

অর্থসংবাদ/এসএম

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যু
স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২১ জনের সুপারিশ স্থগিত, দুজনের বাতিল
ডেঙ্গুতে আরও তিন জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৩৫
চার ভুলেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
নবজাতকের চোখে পুঁজ হলে করণীয়
ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু
জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী?
ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেলো আরও ৬ জনের
সপ্তাহে ২ দিন হাসপাতালে যেতে পারবেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা
সকালের চার ভুলেই বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি